চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে হবে

0

‘লাাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম’ শীর্ষক একটি সংবাদ দু’দিন আগে লোকসমাজে প্রকাশ হয়েছে। এর অনেক কারণের একটি ধান সংগ্রহ ঘাটতির কথা বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটাই অন্যতম প্রধান কারণ। বাজার মূল্যের চেয়ে ক্রয় মূল্য কম হওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে সিন্ডিকেট। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান। প্রতি কেজি আমন ধান আগের বছরের চেয়ে এক টাকা বাড়িয়ে ২৭ টাকা, চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং গমের মূল্য প্রতি কেজি ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয় ওই সভায়। এ সময়ে তিন লাখ মেট্রিক টন আমন ধান, পাঁচ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু গত দুই মাসে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশও অর্জিত হয়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধান সংগ্রহ হয়েছে ২৪ হাজার ১১১ টন। লক্ষ্যমাত্রার ৮ শতাংশ। বিপরীতে তিন লাখ ১৫ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন সিদ্ধ আমন চাল সংগৃহীত হয়, যা এ মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারকে ৯২ শতাংশ ধান এবং ৪০ শতাংশ চাল সংগ্রহ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই ধারাবাহিকতায় চললে চালের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার অনেক বেশি হয়ে যাবে। কিন্তু ধানের সংগ্রহের লক্ষ্য থেকে অনেক পিছিয়ে থাকবে সরকার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বাকি দেড় মাসে ৯০ শতাংশের ওপরে ধান কেনার লক্ষ্য পূরণ কিভাবে হবে, এটাই এখন চিন্তার বিষয়।
প্রতিবছর ধানের মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়। সরকারের এই সংগ্রহ অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরাসরি কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো। কৃষক যাতে কোনোভাবেই ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতেই কৃষকের কাছ থেকে কেনা হয় ধান ও চাল। অন্যদিকে দেশের রাইস মিলগুলো থেকেও সরকার চাল কিনে থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, অনেক সময় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন খোলাবাজারে চাল বিক্রি করা হলে নিম্নবিত্তের মানুষ সেখান থেকে চাল সংগ্রহ করতে পারে। চালের বাজারে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া এই সংগ্রহের উদ্দেশ্য। এদিকে ধান সংগ্রহ পিছিয়ে থাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল কেনায় মনোযোগ দিয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে নিয়মিতই তারা চাল সরবরাহ করছে। এতে খাদ্যের মজুদ নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না বলেও মনে করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারি গুদামে ধান দিয়ে কৃষকদের খরচে পোষাচ্ছে না বলেই তাঁরা ঘরে বসে ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করছেন। আবার সরকারি গুদামে চালের দাম বেশি হওয়ায় মিল মালিকরা চাল দিচ্ছেন বেশি। এতে এই চালগুলো বাজারে আসছে না।