নওয়াপাড়া-সুন্দলী সড়ক নির্মাণে নিম্নমাণের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

0

মজনুর রহমান,মনিরামপুর (যশোর) ॥ মনিরামপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে নওয়াপাড়া-সুন্দলীর প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণে নিম্নমাণের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমাণের খোয়া, বালু ও পাথর ব্যবহার করে বক্স(ম্যাকাডাম) ও কার্পেটিং সার্ফেস তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্ধারিত পরিমাণের পরিবর্তে স্বল্প পরিমাণ বিটুমিনের ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও নকশা বহির্ভূতভাবে বেজ ছাড়াই আরসিসি গাইডপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যে কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে উন্নতমানের সামগ্রী ব্যবহার করে পুনরায় সড়ক নির্মাণের তাগিদ দিয়ে দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে চিঠি ইস্যু করেছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে ৫ কোটি ৫২ লাখ ৩১৩ টাকা বরাদ্দে মনিরামপুর ভায়া নওয়াপাড়া সুন্দলী পাকা সড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ( চার হাজার ৭৬৫ মিটার) দৈর্ঘ্যের পুনঃনির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। মনিরামপুর পৌর শহরের ঢাকুরিয়া মোড় থেকে শুরু হয়ে হরিদাসকাটি ঋষিপল্লীর পূর্বপাশ পর্যন্ত তিন গ্রুপের কাজটি পান চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স , যশোরের চৌগাছা উপজেলার মেসার্স ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স আসিফ এন্টারপ্রাইজ নামে তিন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সেই মোতাবেক ওয়ার্কঅর্ডারের পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করে গত এক সপ্তাহ আগে শেষ করেন।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে তিন গ্রুপের মধ্যে এক নম্বর গ্রুপ মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং তিন নম্বর গ্রুপ মেসার্স আসিফ এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে কাজ দুটি কিনে বাস্তবায়ন করছেন যশোরের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স বনান্তর এন্টারপ্রাইজ। ইতোমধ্যে সড়কের দু পাশ সম্প্রসারিত করে মাটি কেটে খোয়া ও বালু ব্যবহার করে বক্স বা ম্যাকাডাম তৈরি এবং পাথর দিয়ে কার্পেটিং সার্ফেস তৈরির পর পিচ(বিটুমিন) করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে নিম্নমাণের খোয়া,বালু, পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করে এ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও নকশা বহির্ভূতভাবে(বেজ ছাড়াই) সড়কের মোড়ে মোড়ে আরসিসি গাইডপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অভিযোগ রয়েছে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এবং স্বল্প পরিমাণ বিটুমিন দেওয়ায় ইতোমধ্যে সড়কের পিচ(কার্পেটিং) উঠতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী কয়েকবার প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তাদের কথায় কর্ণপাত না করে ওই নিম্নমাণের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, কয়েকস্থানে বিটুমিন উঠে গেছে, হোগলাডাঙ্গা মাদ্রাসার সামনে সড়কের মাঝখান দেবে গেছে। এ সময় কৃষক আইয়ুব আলী অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমাণের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হরিদাসকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর কবির লিটন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সঠিকভাবে নির্মাণের জন্য বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অথবা দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা কোনো কর্ণপাত করেননি।
এ কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে বলেন, স্থানীয়রা যে অভিযোগ করছেন তা সব সঠিক নয়। তবে কিছু গড়িমশি হয়েছে। সে জন্য ঠিকাদারকে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, বেজ ছাড়াই গাইডপোস্ট নির্মান করা এবং কার্পেটিংয়ের সারফেস সঠিকভাবে সম্পন্ন না করায় ইতোমধ্যে দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স ও মেসার্স আসিফ এন্টারপ্রাইজের বিল প্রদান বন্ধ রেখে দ্রুত সঠিকভাবে কাজ সম্পন্নের তাগিদ দিয়ে গত ১৪ মে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
তবে মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক জাকাউল্লাহ বলেন, প্রকৌশলীর ইস্যুকৃত চিঠি এখনও আমি হাতে পাইনি। আমি ছাড়াও মেসার্স বনান্তর এন্টারপ্রাইজ ও আসিফ এন্টারপ্রাইজ যৌথ পার্টনারশিপে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছি। তবে কোনো সমস্যা দেখা দিলে পুনরায় তা মেরামত করে দেওয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে জানতে মেসার্স বনান্তর এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু সাঈদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।