শীতের শুরুতেই রাজধানীতে গ্যাস সংকট

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ শীত এলেই রাজধানীতে গ্যাসের সংকট প্রতিবছরের ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরেই এই দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা। এবার পরিস্থিতি আরো খারাপ। বিশেষ করে ঢাকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে এই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ একেবারেই থাকছে না। এ অবস্থায় রান্নার কাজে কেউ কেউ সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। গ্যাস না থাকায় রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় কাঠের লাকড়ি ব্যবহার করতেও দেখা যায়। সিলিন্ডার কিনে ব্যবহার করলেও লাইনের গ্যাসের বিলও পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। এতে জীবনযাপনের ব্যয়ের বাড়তি চাপে পড়তে হচ্ছে তাদের। সরজমিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর-বছিলা, রায়ের বাজার, লালবাগ, কেরানীগঞ্জ, মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, কাজীপাড়া, কাঁঠালবাগান এবং বাড্ডাসহ বেশক’টি এলাকায় খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার ভাড়াটিয়া রবি ও তার স্ত্রী হোসনা বেগম জানান, মোহাম্মদপুর, বছিলা, রায়ের বাজার এসব এলাকায় প্রতিবছর শীত আসতে না আসতেই গ্যাসের চাপ কমতে থাকে। এবার আরো একমাস আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল থেকেই গ্যাস খুব স্লো হয়ে যায়। যা দিয়ে রান্না করা যায় না। এরপর ৯টার দিকে একেবারে চলে যায়। বিকালের দিকে এলেও গতি কম থাকে। তবে সারারাত আবার ভালোই চলে। রবি বলেন, আমি এই এলাকায় ছোটবেলা থেকে বসবাস করি। কয়েকবছর ধরে দেখছি এই সমস্যা। বাড়ি ওয়ালাদের জানালে তারা বলেন লাইনে সমস্যা। মোহাম্মদপুরের আরো একজন বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম জানান, প্রতিবছরই এই সমস্যা হয়। কিন্তু সমস্যা সমাধান হতে দেখি না। কেউ কথাও বলে না। এটা আমাদের জন্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন. প্রতিদিন সকাল ৯টার আগেই গ্যাস চলে যায়। তাড়াহুড়া করে রান্না শেষ করতে হয়। আর দুপুরে চুলা জ্বলে না। যদি দরকার হয় তবে আলাদা সিলিন্ডার কিনে রাখা আছে সেটা দিয়ে কাজ সারতে হয়। কিন্তু এতে আমাদের খরচ বেড়ে যায়। কারণ প্রতিমাসে গ্যাস বিলতো দিতেই হয়। মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকায় ৩ বছর ধরে বসবাস করেন গৃহিণী শায়লা আক্তার। তিনি বলেন, শীত এলে প্রতিবছরই এমনটা হয়। তবে আগে থেকেই এই সমস্যা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকালবেলা তাড়াহুড়া করে দুপুরের জন্য একবারে রান্না করে রাখতে হয়। অনেক সময় সকালে উঠতে দেরি হলে সেদিন আর চুলা জ্বলে না। ফলে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। তিনি বলেন, সকাল হলেই এতো গতি কমে যায় যে খাবার গরম করার দরকার হলে বা পানি গরম করার প্রয়োজন হলে সেটা করা যায় না। শীতকালে বাচ্চাকে গোসল করানোর জন্য পানি গরম করতে হয়। সেজন্য বৈদ্যুতিক চুলার ব্যবস্থা করে রেখেছি। এতে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যায়। এ অবস্থায় আমরা খুবই সমস্যার মধ্যে আছি। মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা হুমায়ুন হিমু বলেন, আমি দীর্ঘদিন এই এলাকায় থাকি। শীতের দিনে গ্যাসের সমস্যা দেখা যায়। আমার এলাকায় গ্যাসের খুবই গতি কমে যায়। কখনো কখনো বন্ধও হয়ে যায়। এই সমস্যাটি কেন হয় সেটা সঠিক বলতে পারবো না। তবে আমার কাছে মনে হয় লাইনের কোনো ঝামেলার কারণে এই সমস্যা হয়। কারণ আশপাশের সব এলাকায় আবার এমনটা হয় না। শোনা যায় কিছু কিছু এলাকায় একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। একাধিক লাইন আছে সেসব লাইনে হয়তো সমস্যা দেখা দিলে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শীতে রাজধানীর একটি বড় অংশের বাসিন্দাদেরই গ্যাস সংকটের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়। রান্নার কাজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, কখন চুলায় গ্যাস আসবে, গ্যাসের চাপ বাড়বে, আবার চাপ কমার আগেই রান্নার কাজ শেষ করতে হয়। এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয় গৃহিণীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মূলত শীতপ্রধান দেশে গ্যাসের সঙ্গে থাকা কনডেনসেট স্বাভাবিক রাখতে হিটার বা উত্তপ্তকরণের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নেই। এটি সরবরাহ স্টেশনগুলোতে থাকে। তবে সেগুলো দূরে থাকায় শীতের সময় গ্যাস গ্রাহকদের নলে আসতে আসতে আবার কনডেনসেট জমে যায়। এছাড়াও মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ এবং চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই কম থাকার কারণেই এ সংকট তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তিতাসের জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ শাখা (উত্তর) ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আনোয়ার পারভেজ বলেন, গ্রাহকদের সংখ্যার তুলনায় সাপ্লাই কম হচ্ছে সেজন্য মূলত এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ যেসব এলাকায় গ্রাহকদের তুলনায় গ্যাসের লাইন কম। এখন একসঙ্গে তুলনামূলক বেশি গ্রাহদের সেবা দিতে গেলে এই সমস্যা হতে পারে। মিরপুর ১২ নম্বরসহ আরো কিছু এলাকায় এটা বেশি হয়। গ্যাসের চাপ কমে যায়। আবার কোনো কোনো সময় গ্যাস চলেই যায়। তিনি বলেন, এখানে কনডেনসেটের যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে সেটার কারণে এই সংকট হওয়ার কথা না। আসলে গ্যাসের সংকটের জন্যই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।