নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে মানুষ দিশেহারা

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ৮০ টাকার নিচে সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানির পরও ডিমের দাম বেড়েছে। আরও এক দফা দাম বেড়ে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ কেনাবেচা বন্ধ হচ্ছে, এ সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৬শ টাকা। ভোক্তারা বলছেন বাজার তদারকিতে গাফিলতির কারণে ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অধিক মুনাফা লাভ করছেন। শুক্রবার যশোরের বড় বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
শুক্রবার বড় বাজারে ভালো মানের টমেটো বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা, বেগুন ১৬০ টাকা, বরবটি ১৬০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, বাঁধাকপি ১২০ টাকা ঢেঁড়স ৮০/৯০ টাকা, ওল ৮০/৯০ টাকা, শসা ৮০/৯০ টাকা, করোলা ৮০ টাকা, মুখিকচু ৮০ টাকা, ঝিঙে ৭০/৮০ টাকা, পটল ৭০/৮০ টাকা, কুমড়ো ৬০/৮০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৭০/৮০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতা নাসির আলী বলেন, আড়তে সবজি আমদানি হচ্ছে কম, তাছাড়া দাম বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, বেচাকেনা মোটেও ভালো না। পাইকারি সবজি বিক্রেতা ‘আরিফ ভাণ্ডার’ এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী সুজিত কাপুড়িয়া বাবলু জানান, কয়েক দফার টানা বৃষ্টিতে চাষির সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। শুধুমাত্র উঁচু ক্ষেতের সবজি যেগুলো টিকে আছে, তাই বাজারে আসছে। বাজারে ক্রেতা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ একেবারে কম, এ কারণে দাম বেশি। তিনি আশা করেন, চাষিরা আবার নতুন করে সবজির আবাদ শুরু করলে আগামী দেড় মাসের মধ্যে বাজারে সরবরাহ বাড়বে।
এদিকে দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কয়েক দফায় ভারত থেকে প্রচুর ডিম আমদানি হওয়ার পরও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং আমদানির পরে আরও এক দফা ডিমের দাম বেড়েছে। শুক্রবার বড় বাজারে প্রতি পিস মুরগির ডিম বিক্রি হতে দেখা যায় ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা দরে। অথচ আমদানি হওয়ার আগে বাজারে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছিল।
সবজি ও ডিমের সাথে চালের বাজারও অস্থির হয়ে উঠেছে। এ সপ্তাহেও প্রতি কেজি চালে আরও ২ টাকা দাম বেড়েছে। খুচরা চাল বিক্রেতা মো. ইসহাক সরকার জানান, তিনি শুক্রবার বাংলামতি চাল প্রতি কেজি মানভেদে ৮৬ থেকে ৮৮ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা, কাজললতা ও বিআর-২৮ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও মোটা নূরজাহান চাল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি বৃষ্টিতে ধান-চালের ক্ষতি হয়েছে।
অপরদিকে আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা ও বেচাকেনা বন্ধ হচ্ছে। অন্যান্য বছরের মত এবারও ইলিশপ্রিয় মানুষ শেষ দিন কম দামে ইলিশ কেনার জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু বড় বাজার মাছবাজারের আড়তদার আলহাজ পিয়ার মুহাম্মদ সে আশা ভণ্ডুল করে লোকসমাজকে জানান, মোকামে ইলিশ মাছের আমদানি কম। এ সপ্তাহে বাজারে গত সপ্তাহের থেকে প্রতি কেজিতে ৫/৬শ টাকা দাম বেড়েছে। আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ বেচাকেনা বন্ধ হলেও দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
শুক্রবার খুচরা বিক্রেতা ইকরাম বিশ^াস দেড় কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি করেছেন ২৫শ টাকায়। এদিন ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৪শ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৮শ টাকা। ৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৫শ টাকা। ৭শ/৮শ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৮শ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৪শ টাকা। ৩টায় কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১১শ টাকায়, গত সপ্তাহে ছিল ৯শ টাকা আর ৪টায় কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮শ টাকায়, গত সপ্তাহে ছিল ৬শ টাকা।
শুক্রবার বেসরকারি চাকরিজীবী ক্রেতা নাদিম বিশ^াস এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট চক্র। বাজার স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানির পরে দাম কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমদানিকারকরাই বেশি লাভবান হচ্ছেন। কারণ তাদের বাংলাদেশে কাস্টমস ডিউটি দিয়ে আমদানি খরচ পড়েছে প্রতি পিস ডিমে ৭ টাকা। আরেক ক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবজির ক্ষতিকে পুঁজি করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি মুনাফা লাভ করে নিচ্ছে। এসব বিষয়ে সরকারের নজরদারি সংস্থার অবহেলাকে তিনি দায়ী করেন।