কমছে না নারী নির্যাতন

0

বাংলাদেশের নারীরা এখন প্রতিবাদ করতে শিখেছেন। শিখেছেন প্রতিরোধ করতে। তবু কমছে না নারী নির্যাতন-নিপীড়ন। কঠোর আইন করেও তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এর প্রমাণ, গত মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হলেও ধর্ষণের ঘটনা কমেনি। মানবাধিকার সংস্থা আসক বলছে, আইন কঠোর হওয়ার পরও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮৬টি, যা অক্টোবরে বেড়ে হয়েছে ৩৭৪টি। আগস্টে ছিল ১৪৮টি। ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় অক্টোবরে ধর্ষণের মামলা হয় ৮৫টি। সেপ্টেম্বরে মামলা হয় ৬০টি। প্রশ্ন হচ্ছে, আইন আছে, মামলাও হয়, নির্যাতনবিরোধী সভা-সমাবেশও চলে। আছে সরকারি নির্দেশনা, কর্মপরিকল্পনা, প্রচার। তবু কেন কমছে না নারীর প্রতি সহিংসতা?
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা ছিল এক লাখ ৬০ হাজার ৭৫০টি। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৯৩টি। আসকের হিসাবে, ১০ মাসে দেশে আড়াই হাজারের বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ৪৮৩টি, ধর্ষণের ঘটনা এক হাজার ৩৪৯টি, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনা ১৮৪টি। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর তথ্য মতে, গত বছর নারী ও শিশু নির্যাতন সহিংসতার ঘটনায় কল এসেছে ছয় হাজার ২৮৯টি। চলতি বছরের ১০ মাসে কল এসেছে সাত হাজার ৭৩৫টি। করোনাকালের শুরুতে মার্চ মাসে কল ছিল সবচেয়ে বেশি, এক হাজার ১৬৪টি। পয়লা মে থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় মাসে ৯৯৯-এ ধর্ষণের অভিযোগে ২৯৯টি কল আসে। এ সময় ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করেন ১২১ জন এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন ১৩৩ জন। ছয় মাসে যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ৫৯৫ জন নারী।
গত অক্টোবরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জরিপে জানা যায়, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। গত মাসে মোট ৪৩৬ নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতনের শিকার হয়। গত জুনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপের তথ্যমতে, গত মার্চ থেকে প্রতি মাসে পারিবারিক সহিংসতা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। করোনায় সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক সঙ্কট ইত্যাদির কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। লণীয় বিষয়, নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হচ্ছে। কিন্তু তা বিচারের জন্য বছরের পর বছর পড়ে থাকে। তাই নারী নির্যাতন কমাতে হলে সত্যিকার অর্থে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতে হবে। দ্রুত বিচার হতে হবে। নারী নির্যাতনের কারণগুলো পর্যালোচনা করে প্রতিরোধের নতুন পথ বাতলাতে হবে। একই সাথে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য সমাজে যেসব ব্যবস্থা ধর্ষণের সহায়ক সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। শুধু ফাঁসিতে ঝোলানো ধর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর হবে না সেটি তথ্য-উপাত্তে প্রমাণিত। এ বিষয়ে আমাদের নীরবতা, ত্রেবিশেষে মতার অপব্যবহার এবং নারীর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, একজন নারী কখনো মা, কখনো স্ত্রী, কখনো মেয়ে আবার কখনো বোন। প্রতিটি অবস্থানেই নারী সম্মান পাওয়ার যোগ্য, এই চেতনা যদি সবাই ধারণ করেন, তবেই কেবল নারী নির্যাতন কমতে পারে। এই ধারণা জনমানসে প্রোথিত করতে হলে স্কুল, কলেজসহ সব শিাপ্রতিষ্ঠানে বিষয়টি পাঠ্যভুক্ত করতে হবে। যৌনশিা নিয়েও আলোচনা হওয়া জরুরি। এ শিা শুরু করতে হবে পরিবার ও স্কুল-কলেজ থেকে।