জাতীয় শিক্ষানীতি যেন সাংঘর্ষিক না হয়

0

জাতীয় শিক্ষা আইন ২০১৯-এর খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। ৫৮টি ধারাসংবলিত খসড়া পর্যালোচনা করা হয় এক সভায়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে একাধিকবার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এমনকি একবার মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের পরও তা ফেরত পাঠানো হয়। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শিক্ষা আইন ২০১৯-এর খসড়ার ৯ ধারার ২(ক) উপধারায় বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারণ বা পুনর্ন্ধিারণ না করা পর্যন্ত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত হবে মাধ্যমিক স্তর। (খ) উপধারায় বলা হয়েছে, একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা আইনের খসড়া যেভাবে আছে সেটা পাস হলে তা হবে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রাথমিক শিক্ষার আওতা বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। তবে আগামী দিনের প্রস্তুতি হিসেবে এখন ৫৯৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা চালু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। আর সে ল্েযই সবার সম্মতিতে শিক্ষানীতিতে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে নতুন আইন পাস হলে প্রাথমিক শিক্ষা আর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার সুযোগ থাকবে না। শিক্ষা আইনের খসড়ার ২৬ ধারার ১ ও ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নোট বই, গাইড বই কেনা বা পাঠে বাধ্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ উদ্যোগটি ভালো। তবে দুভাগ্য হচ্ছে এখনও নোট, গাইড সবই চলছে শিক্ষকদের নির্দেশে। জাতির স্বার্থে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকেই দেশের শিানীতি প্রণীত হওয়া প্রয়োজন। এ ল্েয অনেক আগেই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। অবকাঠামো উন্নয়নসহ উপযুক্ত ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল তৈরির উদ্যোগ নিলে উপযুক্ত শিক্ষক পাওয়া সহজ হতো। কিন্তু তা না করে শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে কি না তা ভেবে দেখা দরকার। মনে রাখা দরকার, জাতীয় স্বার্থকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে।