সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ধারাবাহিকতায় যশোর, ঘরে ঘরে অসুস্থ মানুষ

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ আবহাওয়ার চরমভাবাপন্ন আচরণ চলছে যশোরে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেশের দক্ষিণের এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। এর আগের বছরগুলোতে পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গায় উচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হলেও সেটি যেনো পরিবর্তন হয়ে এখন যশোরে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে।  শনিবারও যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শুক্রবারও যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়।
এদিকে আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাবের কারণে যশোরের ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, পক্সসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এ অবস্থায় মানুষকে দিনের বেলায় বাইরে কম বের হওয়ার পাশাপাশি ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাসজুড়েই তীব্র তাপে পুড়েছে যশোর। এপ্রিলের শেষদিন গত মঙ্গলবার দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এই জেলায়। সেদিন যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৫২ বছরের ইতিহাসে এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড বলে আহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়।
এদিকে মে মাসের শুরুতে তাপমাত্রা কমতে থাকলেও গরম কিন্তু কমেনি। ১ মে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪২ দশমিক ৮ ডিগি সেলসিয়াস, ২ মে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও শুক্রবার রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ থেকে অনেকটা আন্দাজ করা যাচ্ছে তাপমাত্রা আগামী কয়েকদিনে ক্রমশ কমতে থাকবে।
তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে তাপমাত্রা যতই কমুক না কেনো গরম অনুভূত হচ্ছে ঠিক আগের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে দিনের তাপমাত্রার পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি পাচ্ছে না মানুষ। এতে শিশু-বয়স্কসহ প্রায় সব বয়সী মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ আমিরুল আজাদ শনিবার বলেন, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৩৮ দশমিক ৮। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ৩৮.৫ ও মোংলায় ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তিনি বলেন, যশোরসহ খুলনা বিভাগের তিন জেলায় গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা যতটুকু না তার চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। তবে দু-একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা কমে সহনীয় পর্যায় আসতে পারে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে তীব্র এ তাপপ্রবাহের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরমের কারণে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর আগে গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী শিশু ও বয়স্করা বেশি হলেও এখন সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবারেই কেউ না কেউ অসুস্থ আছেন বলে জানা গেছে। জেলা শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গরমে অসুস্থ হয়ে মানুষ ভর্তি হচ্ছে। তবে হাসপাতালে জায়গা ও রোগীর আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
শহরের উপশহর এফ ব্লকের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার বাসায় আমি ছাড়া সবাই অসুস্থ। দুই ছেলে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জ্বর-সর্দি কাশিতে ভোগার পর স্ত্রীও গতকাল থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, শুধু আমার পরিবার নয়, আশপাশের প্রায় অধিকাংশ বাসা-বাড়িতেই অসুস্থ রোগী রয়েছেন।
একই কথা বলেন, শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা আলিমুর রহমান। তিনি বলেন, গত তিনদিন ধরে রাতের বেলায় গরম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলেছে। দিনের বেলায় ঘরে-বাইরে থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া গেলেও রাতে গরমের কারণে ঘুমানো যাচ্ছে না। ফ্যানের বাতাসে যেনো আগুনের হল্কা ছড়ায়। তিনি বলেন, জীবনে এমন গরম আর কখনও দেখেনি। গরমে জ্বর-কাশির পাশাপাশি পেটের রোগ বেশি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে যশোর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ডা. আলাউদ্দীন আল মামুন বলেন, যশোরাঞ্চলের ওপর দিয়ে যে টানা তাপপ্রবাহ চলমান রয়েছে এটি একেবারেই অস্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতি এর আগে মানুষ আর কখনও পড়েনি। মানুষ এ আবহাওয়ার সাথে পেরে উঠছে না। যেকারণে মানুষ হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, পক্সসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। দিনের বেলায় বাইরে না বের হওয়া ভালো। তবে সবচেয়ে সতর্ক থাকতে হবে ডিপ ফ্রিজের পানি যেনো কেউ পান না করেন। তিনি বলেন, এ অবস্থায় শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বেশি বেশি যতœশীল হওয়া জরুরি।