প্রকল্পের দুর্নীতি সুফলকে করছে রোহিত

0

দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল থেকে জনগণের বঞ্চিত হওয়ার কথা সম্প্রতি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও উচ্চারিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়া জনগণের শ্রম ও ঘামের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু দেশের মানুষ এসব উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল কতটা ভোগ করতে পারছে বা পারবে তা নির্ভর করে মূলত দুটো বিষয়ের ওপর। এক. প্রকল্পগুলো কতটা সুপরিকল্পিত; দুই. প্রকল্পগুলো কতটা অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। পরিতাপের বিষয় হলো, সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি এখন এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে যে, প্রকল্প প্রণয়নের সময় বা প্রকল্পের পরিকল্পনাতে কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় দুর্নীতির নকশা প্রস্তুত করা যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপরে (জাগৃক) তিনটি প্রকল্পে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মাটি ভরাটের নামে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থের নয়-ছয়ের যে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে তা উপরোক্ত বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে।
গত মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘মাটি ভরাটে পুকুরচুরি’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতীয় গৃহায়ন র্কর্তৃপরে তিনটি প্রকল্পে মাটি ভরাটের নামে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের একটি প্রকল্পে প্রায় ২ কোটি টাকার স্থলে মাত্র ৭৫ লাখ টাকার মাটি ভরাটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর নোয়াখালীর মাইজদীর একটি প্রকল্পে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বেশি বিল করা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে সংস্থাটির পিরোজপুর জেলার সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রকল্পেও। সেখানে অসত্য তথ্য দিয়ে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বেশি বিল করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রাথমিক অনিয়মের সত্যতা পেয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপ। জাতীয় গৃহায়ন র্কর্তৃপরে মতো প্রতিষ্ঠানটিতে যে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির মচ্ছব চলছে, তা নিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন সংবাদ বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ করে আসছে। দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)ও প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত এক বছরে ৯২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিরপুরের দুয়ারীপাড়ার একটি অবৈধ উচ্ছেদের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ, নিজ নামে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় ৮৮ ফ্যাট প্রকল্প, লালমাটিয়ায় কমিউনিটি সেন্টারের বাণিজ্যিক ফোরে পজিশন হাতিয়ে নেওয়া, তেখাদিয়া প্রকল্পে নকশা বদল করে ঠিকাদারকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দেওয়া, চাহিদা মাফিক অর্থ না পেলে ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা, নিজ পছন্দের কর্মকর্তাকে বসিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অর্থ নেওয়া, ১০০ কোটি টাকার কাজ মোহাম্মদপুর প্রকল্পে ৫ ভাগ বাড়িয়ে চারটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিস্তর অভিযোগ ধারাবাহিকভাবে উত্থাপিত হওয়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি জাগৃকের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর বিরুদ্ধেও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ উঠেছিল। সরকারি প্রকল্পের দুর্নীতি বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের অলিখিত দায়মুক্তিকে অন্যতম বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকার মতো অর্থনৈতিক প্রগতির খবর যেমন আশা জাগানিয়া, তেমনি সর্বগ্রাসী দুর্নীতির খবর সেই আশাভঙ্গের কারণ।