দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা নিন

0

বাজার ঊর্ধ্বমুখী, অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। টানা তিন মাসেরও অধিক সময় নিত্যপণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী রয়েছে। দুয়েকটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে স্থির থাকলেও অধিকাংশই অস্থির। বাড়ছে তো বাড়ছেই। চালসহ কোনো পণ্যের দরদাম সাধারণের আয়ত্তে নেই। চালের দাম ৫০ টাকা কেজির নিচে নেই বললেই চলে। ঝালের পোয়া ৬০। আলুর কেজি চল্লিশ, বেগুন ৮০, কাঁচকলা, মিঠা কুমড়া ৬০, ষাটের নিে চ কোন তরকারি নেই। ভারত হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পেঁয়াজের দর বেড়েছিল। সেটা আপাতত বাড়ছে না বটে, তবে যে দরে উঠেছিল সেখান থেকে আর তেমন নামেনি। ৮০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, রসুন এখনও ১শ’ টাকা সর্বনিম্ন চলছে। আর এখন ভোজ্য তেলের দাম লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী। এক মাসের মধ্যে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা বেড়েছে। খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দামও বেড়েছে। বেড়েছে শর্ষের তেলের দামও। চুলে মাখা নারকেল তেলও বাড়ছে সমানতালে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল খুচরায় প্রতি লিটার সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগেও দাম ছিল প্রতি লিটার ১১০ টাকা। মঙ্গলবার রূপচাঁদা ও তীর ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে ৫৩০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে দাম ছিল ৫০০ টাকা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক মাসে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। মঙ্গলবার প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৪ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও তা ছিল ৮২ থেকে ৯৩ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৮২ থেকে ৮৭ টাকা লিটার। এক মাস আগেও পাম অয়েল ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা লিটার। এখন ৮৮ থেকে ৯০ টাকা। এক মাসের মধ্যে দুই দফায় প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। তীর ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১১৫ টাকা। রূপচাঁদা সয়াবিনের পাঁচ লিটারের বোতল ৩০ টাকা বেড়ে ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্য তেলের প্রায় শতভাগ আমদানি করতে হয়। তবে মিল ও বাজারে ভোজ্য তেলের ঘাটতি নেই। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করে পাম অয়েল। এর দাম বাড়লে অন্যগুলোর দামেও তার প্রভাব পড়ে। করোনাভাইরাসের কারণে মে মাস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের তেলের দাম ছিল সহনীয়। জুন থেকে আমদানি বাড়া শুরু করলে পাম অয়েল ও সয়াবিনের দাম বেড়ে যায়। এখন কেউ কেউ বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রভাব যেমন পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বিশ্ববাজারে, তেমনি ভোজ্য তেলের দামেও পড়েছে। এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মূলতঃ বাজারে সরকারের কোন দৃষ্টি নেই। প্রশাসনিক মনিটরিং নেই। ফলে, সংকট বাড়ছে। এখন বাজারে পণ্য সরবরাহের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প ভাবতে হবে। টিসিবিকে পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় করার বিকল্প নেই। বাজারে যে মনোপলি চক্র গড়ে উঠেছে তা ভাঙতে হবে। এখানেই সরকারের ভূমিকা পালনের বিষয়। সব সময় বাজারে দরের কিছু উত্থান-পতন হতেই পারে, তার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা থাকতে হবে। বাংলাদেশে একবার দর উঠলে আর নামে না। এ রীতি ভাঙতে হবে। শুধু মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ অভিযানে সফলতা আসছে না। সরকারকে বিকল্প ভাবতে হবে। নাগরিক কল্যাণে অসাদুদের বিরুদ্ধে কঠোর হতেই হবে।