গণপরিবহনে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ম মেনে চালাতে হবে

0

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই গত মঙ্গলবার থেকে গণপরিবহন আগের অবস্থায় ফিরেছে। ‘নতুন স্বাভাবিক’ ব্যবস্থায় গণপরিবহন থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সচেতন যাত্রীদের মধ্যেও একই আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। এর যথাযথ কারণও রয়েছে। এমনিতেই আমাদের গণপরিবহনের অবস্থা খারাপ। সংক্রমণের শুরুর দিকে কিছুটা নিয়ম মেনে ছিল। কিন্তু দিন যতই গড়িয়েছে, ততই নিয়ম মেনে চলার প্রবণতা ভেঙে পড়তে শুরু করে। প্রথম দিনের গণপরিবহন চলাচল পর্যবেক্ষণ করে গণমাধ্যমে যেসব খবর এসেছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ বাসগুলোয় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে না।
সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার থেকে আগের ভাড়ায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আসনসংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। গণপরিবহনে যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর, হেলপার ও টিকিট বিক্রিতে নিয়োজিতদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। তাঁদের হাত ধোয়ার জন্য সাবান, পানি ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাত্রা শুরু ও শেষে বাস ও মিনিবাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। যাত্রীর হাতব্যাগ ও মালপত্র জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাসের চালক ও হেলপারের মুখে মাস্ক ছিল না। নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাসে ওঠার সময় গেটে নেই স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। যাত্রীদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীন। বাসে বা গণপরিবহনে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না। অন্যদিকে কাগজে-কলমে গণপরিবহন আগের ভাড়ায় ফিরলেও করোনাকালের আগে যে কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় হতো, এখনো সে রকমই চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, যেসব শর্ত দিয়ে গণপরিবহনকে আগের ভাড়ায় ফেরানো হয়েছে, শর্তগুলো মানা হয়নি। বিআরটিএর পক্ষ থেকে জোরালো তদারকির কথা বলা হলেও তা দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রকাশিত খবরে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও করেছেন যাত্রীরা। একাধিক বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের চিত্রও দেখা গেছে। শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও প্রায় একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহন এভাবে চলাচল করলে তাতে অতিরিক্ত সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। তাঁদের মতে, সামান্যতম উপেক্ষা নিজের ও আশপাশের মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে বিপদ আছে। মাস্ক পরা, যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, পরস্পর নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটা মেনে চলা তাই জরুরি, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের ‘নতুন স্বাভাবিক’ ব্যবস্থায় ফিরতে হবে। কিন্তু নিয়ম মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। গণপরিবহন নিয়ম মেনে চলাচল করুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।