বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিন

0

বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) ষষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে দীর্ঘদিন পর গত মঙ্গলবার। তবে করোনা মহামারীর কারণে এবারের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। বৈঠকে দীর্ঘদিন থেকে অমীমাংসিত তিস্তাসহ ছয় নদীর পানি বণ্টন সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরেও আলোচনা হয়েছে দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত ঋণচুক্তির অর্থ ছাড়, সীমান্ত হত্যা, প্রতিরা কানেকটিভিটি, নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়। এমনকি পেঁয়াজের মতো সামান্য একটি পণ্যের রফতানি হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় ভারতকে বাংলাদেশ তার উদ্বেগ জানাতেও ভোলেনি। তবে এবারের বৈঠকে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে ভারতের ঋণচুক্তির (এলওসি) অর্থছাড় এবং তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি। উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে ২০১০, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিনটি এলওসি স্বার হয়। সব মিলিয়ে ৭৩৮ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তির মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৭০ কোটি ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এলওসির বাস্তবায়নের এই ধীরগতি থমকে দিয়েছে অন্য সব প্রকল্পের বাস্তবায়ন। এখন ভারত বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কি কি পদপে গ্রহণ করে সেটাই দেখার বিষয়।
কিছুদিন আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা দু’দিনের এক আকস্মিক সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বার্তা নিয়ে এসেছিলেন এবং সৌজন্য সাাত করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত বৈঠকও হয়েছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগে খোলাখুলিই বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গভীরভাবে গ্রোথিত। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক। সেদিক থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সখ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই বলে সমস্যাও কিছু কম নেই, যেগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত হত্যা, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য ব্যবধান হ্রাস, সর্বোপরি ভারতীয় আট বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ঋণ দ্রুত ছাড়ের ব্যবস্থা। মনে রাখতে হবে, ভারত মনু নদীর পানি নিলেও ২০১৫ সালে প্রতিশ্রুত তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে অদ্যাবধি। যে কারণে বাংলাদেশ তিস্তা নদী প্রকল্পে চীন থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ঋণ নিতে যাচ্ছে। অতঃপর এসব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে ভারতকেই।
পারস্পরিক প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য আরও সহজীকরণে স্থলবন্দর, রেলপথ, সড়কপথসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য এক স্থানে সব সুবিধা দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই প্রোপটে দু’দেশের পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা বৃদ্ধির আরও অবকাশ রয়েছে নিঃসন্দেহে। ভারতে তৈরি অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে দেয়ার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ অবশ্য বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী টিকাটিই সংগ্রহ করবে। বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশাও তেমন।