প্রসঙ্গ : রমজানের আগেই মূল্য বৃদ্ধি

0

রমজান মাস মানে সিয়াম সাধনার মাস, আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাস মুনাফার নয়, দানের মাস। এ মাস ভোগ নয়, ত্যাগের মাস। এ মাস আল্লাহর দফতরে ক্ষমা প্রার্থনার মাস। পৃথিবীর দেশে দেশে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মুসলমানরা রমজানের এই মাহত্ম মেনে চলে। অধিকাংশ দেশের মুসলিম ব্যবসায়ীরা রমজান মাসকে সওয়াব বা নেকি কামানোর মাস হিসেবে গ্রহণ করে। তারা কেউ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ইফতার সামগ্রীর মূল্য কমিয়ে সব থেকে দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসে। ধনী ব্যবসায়ীরা মাসভর দান খয়রাত করেন। সারাবছর অর্জিত মুনাফা থেকে তারা এ কাজ করেন। মূলত: রমজানকে তারা নেকি অর্জনের মাস হিসেবে কাজে লাগান। গরিবের দোয়া ও আল্লাহর সন্তষ্টির জন্যই তারা এ ত্যাগ করেন। তবে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। সম্ভবত শুধুই বাংলাদেশ। রমজান এলেই এখানে শুরু হয় আর্থিক মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতা। ধনী ও গরিব নির্বিশেষে ক্রেতামাত্রই এর শিকার হয়। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই এখানে বৃদ্ধি পায়। মূল্য বৃদ্ধির এই নোংরা খেলা শুরু হয় ৩ মাস আগে থেকেই। সরকারের উদাসীনতাকে কাজে লাগাতে মুনাফালোভীরা ৩ মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিসহ নানা রকম কৌশলে কয়েক ধাপে মূল্য বাড়িয়ে তারা রমজানের আগেই মূল্য টার্গেটে পৌঁছায়। এবার করোনা ‘গজবের’ মাসেও তারা নিবৃত হয়নি বরং উৎসাহিত হয়েছে। লকডাউনে পড়ে কর্মহীন মানুষের রমজানের কষ্ট তাদের কাছে মূল্যহীন হয়েছে। তিন মাস আগে থেকে ধাপে ধাপে মূল্য বৃদ্ধির পর রমজানের আগের দিনও বাড়িয়েছে আরেক ধাপ। যা ধনীদেরও কষ্টের কারণ হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট গত পরশু শুক্রবার লোকসমাজে প্রকাশিত হয়েছে।
পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইনের যশোর বাজারে সরেজমিন প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল রমজানের একদিন আগে আরও এক দফা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবেদনে তিনি ডাল থেকে শুরু করে আদ্য পর্যন্ত প্রায় সকল নিত্যপণ্যের এক সপ্তাহের মূল্য ব্যবধান তুলে ধরেছেন। তাতে দেখা যায়, সব ধরনের ডালে কেজিতে ১০ টাকা হারে মূল্য বেড়েছে। অর্থাৎ প্রতি মনে বেড়েছে ৪শ’ টাকা। আদায় বেড়েছে কেজি প্রতি ৫০ টাকা। মূল্য বৃদ্ধির তালিকা থেকে মুরগিও বাদ পড়েনি। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে এই মুরগি মাইকিং করে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। তিনি এক মাসের ব্যবধানে যা উল্লেখ করেছেন, তা রীতিমত উদ্বেগের বিষয়। প্রতিটি পণ্যে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আদায় মূল্য বেড়েছে প্রায় ২শ’ টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, করোনা ও রোজার মধ্যে দুটি নমুনা পরিস্থিতির মধ্যে দফায় দফায় এতো মূল্য বৃদ্ধি হলেও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বাজার মনিটরিং বলতে যা বুঝায় তার কোন দৃশ্যই কারো চোখে পড়েনি। ফলে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া মূল্য বৃদ্ধিতে কোন দ্বিধা করছে না। সরকার বা প্রশাসনের এমন উদাসীনতা চলতে থাকলে ঈদের আগে বাজার মূল্য ভয়াবহ হয়ে যাবে। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে আপনাদের নির্দেশে মানুষ গৃহবন্দি হয়ে আছে। উপার্জন বন্ধ। ঘরে ঘরে অভাব স্পষ্ট। এরই মাঝে সিয়াম সাধনার পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে। সারাদিন রোজা শেষে পেট ভরে দুটো খাবার প্রয়োজন। দ্রব্যমূল্যের কারণে তা ব্যাহত হলে গৃহবন্দিরা বিুব্ধ হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সুখকর হবে না। তাই সময় থাকতেই পদক্ষেপ নেন।