দলমতের ঊর্দ্ধে থেকে সংবাদপত্র শিল্প বাঁচান

0

কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। করোনা সংকটের প্রভাবে করোনাকালে দেশের সংবাদপত্রশিল্প প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সব পত্রিকা বিক্রির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। একইভাবে কমেছে বিজ্ঞাপন। ঢাকাসহ দেশজুড়ে অনেক সংবাদপত্র প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। কিছু পত্রিকা শুধু অনলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক পত্রিকা তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না। যে পত্রিকাগুলো ছাপা অব্যাহত রেখেছে তারা বাধ্য হয়ে ব্যয় সংকোচনের নানা পদ্ধতি খুঁজছে।
সংবাদপত্রের আয়ের পথ দুটি সংবাদপত্র বিক্রির টাকা ও বিজ্ঞাপন। একটি সংবাদপত্র বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয় কখনো উঠে আসে না। সে েেত্র আয়ের পথটা হচ্ছে বিজ্ঞাপন। কিন্তু বিজ্ঞাপন এখন শূন্যের কোঠায়। পাঠকও কমে গেছে। ফলে সংবাদপত্রশিল্প বাঁচিয়ে রাখাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সংবাদপত্রশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) সব মহলের, বিশেষ করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। সরকার কী করে সংবাদপত্রশিল্পকে রা করতে পারে, তার একটি পথও দেখিয়েছে নোয়াব। সরকার সংবাদপত্রকে দুই ধরনের সহায়তা দিতে পারে। প্রথমত, সরকারের কাছে বিজ্ঞাপন বাবদ সংবাদপত্রগুলোর যে পাওনা রয়েছে সেই টাকা সরকার পরিশোধ করে দিলে তা সংবাদপত্র প্রকাশনা অব্যাহত রাখার েেত্র অনেক বড় সহায়ক হবে। কোভিডকালে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। সাংবাদিকদেরও দিচ্ছে। তবে তা শুধু দলীয় বিবেচনায় এ দলীয় বিবেচনা পরিত্যাগ করে। এই সংকটের সময় দলমত নির্মিশেষে সকল সংবাদকর্মীদেরও সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসতে পারে সরকার। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সেক্টরকে যেভাবে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, সংবাপত্রশিল্পকেও স্বল্প সুদে সেই ঋণ দেওয়া হলে অনেক সহায়ক হবে। এভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে সংবাদপত্রকে বাঁচিয়ে রাখার েেত্র সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ঋণের ক্ষেত্রে অবশ্যই পত্রিকার অবস্থান মূল্যায়ন করতে হবে।
২০১৪ সালে সংবাদপত্র সেবা শিল্প হওয়ার পরও বিশেষ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। আবার শ্রম আইন অনুসারে সংবাদপত্র একটি শিল্প। রুগ্ন শিল্পে পরিণত হওয়া সংবাদপত্রের করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছিল নোয়াব। একই সঙ্গে নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। অন্য দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎস কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা, উৎসস্থলে কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশের পরিবর্তে অগ্রিম কর (এআইটি) শূন্য শতাংশ করা। এসব দাবি পূরণ করা হলে দেশের সংবাদপত্রশিল্প কিছুটা হলেও সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে পারত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। বাংলাদেশে সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব আন্দোলন-সংগ্রামে সংবাদপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশের স্বাধীনতা ওগণতন্ত্রের সংগ্রামে সংবাদপত্রের ভূমিকা একটি ইতিহাস। আমরা আশা করবো, সরকার সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচাতে অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে। এক্ষেত্রে আমাদের অনুরোধ সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের দলীয় চিন্তার ঊর্ধ্বে রাখবে।