আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান

0

দেশ যখন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে কাঁপছে তখন ভয়ঙ্কর ঝাকুনি-কাপুনি দিয়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড করে গেলো আম্পান। দীর্ঘ আট ঘন্টা এক নাগাড়ে কোথাও দেড়শ’, কোথাও দুশতাধিক কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানা এই আম্পান কোন ব্যক্তির নয়, এ এক ঝড়ের নাম তা সবারই জানা। সাগরে আম্পানের উৎপত্তির পর থেকে দেশের পত্র-পত্রিকা ও টিভির প্রচার থেকে মানুষ জেনেছিল আম্পানের গতি প্রকৃতি আচরণ। কবে কখন কোন পথে কত বেগে আঘাত হানবে তাও জানা ছিল সবার। সে কারণে আম্পানের তান্ডব থেকে উপকূলীয় মানুষদের কীভাবে বাঁচাতে হবে এবং তারা নিজেরা কীভাবে বাঁচবে তা জাতে বুঝতে সহজ হয়েছিল। গতকাল বিকেল পর্যন্ত খবর অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪ জন। যার মধ্যে যশোরেরই ৫ জন রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পাওয়া তথ্যে হয়ত মৃতের সংখ্যা আরও কিছু বাড়তে পারে। তবে যশোরে বাড়ার সম্ভাবনা কম। যশোরে এই ৫ জনই অনেক বেশি। কারণ নিকট অতীতে ঝড়ে যশোরে এতবেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। আম্পানের এই আঘাতে মানুষের প্রাণহানী নানা কারণে কম হলেও ফল, বৃক্ষ, ফসল ও কাঁচা আধাপাকা বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ না হলেও দু’একদিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যাবে। আমরা প্রত্যাশা করি, সে ক্ষতি যেন অসহনীয় মাত্রায় না হয়। ‘সুপার সাইকোন’ রূপ নেয়া আম্পান বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানে। দু’শতাধিক কিলোমিটার গতিতে উপকূলে আঘাত হানা আম্পান যশোরাঞ্চল লন্ডভন্ড করে ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে। যশোরাঞ্চলের মানুষের জন্য এ ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। আয়লা, সিডর, ভয়ঙ্কর হলেও এ অতটা ভয়ঙ্কর ছিল না, তাদের গতিবেগ ও ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল কম।
অপরদিকে, আম্পানের স্থায়িত্ব বিকেল ৫টা থেকে রাত প্রায় ২টা পর্যন্ত ছিল। ঝড়ের মারাত্মক দিক ছিল একটানা এবং ভয়ঙ্কর আওয়াজ। বহু প্রবীণ বলেছেন, এমন ভয়ঙ্কর গর্জন তারা অতীতে শোনেননি। কেউ কেউ বলেছেন, পিতার মুখে শুনেছি ১৩১৬ সালে এমনি এক ভয়ঙ্কর গর্জনের ঝড় হয়েছিল, তার শব্দে অনেকের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়েছিল। বাংলা ১৩১৬ সালের ওই ঝড় এ অঞ্চলে আজও ভীতিকর রূপকথা হয়ে আছে। বহু মানুষের প্রাণহানী আর ধ্বংসযজ্ঞের সে কাহিনী আজও আলোচিত হয়। আম্পানের গর্জনটা তেমনই ছিল। তবে ষড় প্রত্যক্ষ করা অনেকে অভিমত সৌভাগ্য আমাদের যে, ঝড়ের যাত্রা পথ ছিল অনেক উঁচুতে। এ কারণে ক্ষতিটা ১৬ সালের ঝড়ের মতো হয়নি। অবশ্য, একথা সত্য যে, ১৩১৬ সাল আর ১৪২৭ সালে এক নয়। তখন কুঁড়ে ঘর আর মাটির দেওয়াল ছিল, এখন ইট-পাথরের ইমারতে ভরা। ঝড় আর ভূমিকম্প মোকাবেলায় সক্ষম ভবনই এখন বেশি। তাই, ক্ষতিও কম। তাছাড়া এখনতো আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া হয়। মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যায়। সময়ের ব্যবধানে প্রযুক্তি হয়তো আরও শক্তিশালী হয়ে ঝড়কে পরাভূত করতে পারবে। আমরা প্রযুক্তির সেই অগ্রগতির প্রত্যাশা করি। আমরা আম্পানের আঘাতে নিহতদের মাগফেরাত কামনা করি এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতদের সুচিকিৎসা ও সুস্থতা কামনা করি। সেই সাথে প্রশাসনের প্রতি ক্ষয়ক্ষতি সঠিকভাবে নিরুপণ করে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই। সবশেষে মহান রাব্বুলের কাছে মিনতি করি, আমাদেরকে ঝড় আর করোনার কবল থেকে রক্ষা করুন।