সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হতে হবে

0

মাঝরাতে সন্ত্রাসী স্টাইলে বাড়িতে ঢুকে সাংবাদিক আটক এবং কারাদণ্ড ও জরিমানার ঘটনা নজিরবিহীনই বটে। শুধু সাংবাদিক নয়, কাউকে এভাবে আটক করা যায় না। ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার মাঝরাতে, কুড়িগ্রামে; বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন পোর্টালের জেলা প্রতিনিধির রিগানের ক্ষেত্রে। তাঁকে ঘরের দরজা ভেঙে ধরে নিয়ে গিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় জেলা প্রশাসকের দপ্তরে নিয়ে সাংবাদিককে নির্মম প্রহার করা হয়। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেছেন, জোর করে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাউকে সাজা দিতে পারেন না। প্রসঙ্গত, মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানের কথা বলা হলেও ওই জেলা প্রতিনিধিকে ছাড়া ওই অভিযানে আর কাউকে আটক করা হয়নি বা সাজা দেওয়া হয়নি। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ। অতঃপর জেলা প্রশাসক ও আরডিসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক ও শাস্তি দেওয়ার পরিপ্রেেিত সেখানকার সাংবাদিকরা বলেছেন, জেলা প্রশাসক ও প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার কারণে প্রতিশোধমূলকভাবে মধ্য রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর সাজানো মামলায় তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন অবশ্য অভিযোগ নাকচ করে। রিগানের স্ত্রীর ভাষ্য, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে বেশ কয়েকজন লোক গিয়ে তাঁদের বাসার দরজা খুলে দিতে বলে। একপর্যায়ে তারা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে। সাত-আটজন মিলে তাঁর স্বামীকে মারতে শুরু করে। তাদের হাতে রাইফেল, পিস্তল সবই ছিল। মারধর করতে করতেই তারা তাঁকে নিয়ে যায়। রাত ১টার দিকে জানা যায়, রিগানকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে বিবস্ত্র করে পেটানোর পরে মাদকের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। নির্যাতনে তার সারা শরীর রক্তাক্ত হয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, বাসা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিতে পারেন না। আটক করার একটা নিয়ম আছে। তাদের, অর্থাৎ জেলা প্রশাসন সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর যদি এ ধরনের সাজা দেওয়ার ঘটনা ঘটে, তবে সন্দেহের অবকাশ থাকে যে এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে। ঘটনাটিকে বেআইনি আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তারা বলেছে, আইনের এমন অপপ্রয়োগ আইনের শাসনের ও সাংবিধানিক অঙ্গীকারের পরিপন্থী এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। জড়িতদের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সাংবাদকি সমাজ সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। তারা বলেছেন, শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে প্রশাসন তথা সরকারের ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। প্রশাসন ও পুলিশের সাম্প্রতিক ভূমিকায় মনে হওয়া স্বাভাবিক, তারা তুঘলকি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এসব কাম্য নয়। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও আরডিসিকে প্রত্যাহার করাই যথেষ্ট নয়। সরকারকে বিব্রত করে এমন কোনো পদপে থেকে প্রশাসনের লোকদের নিবৃত্ত করতে হবে। আর সে জন্য ওই ডিসি ও আরডিসিসহ ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও আইনের অপপ্রয়োগ এবং নির্যাতনের অভিযোগে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে।