ডব্লিউটিআইয়ের ব্যারেল এখন ২০ ডলার, ব্রেন্ট ২২ ডলার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারের টালমাটাল অবস্থা দিন দিন আরো জটিল হয়ে উঠছে। রেকর্ড দরপতন ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাড়ছে সংশয়। এক মাস আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের ওপরে ছিল। সর্বশেষ কার্যদিবসে তা ২০ ডলারে নেমে এসেছে। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি ব্যারেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ২০ ডলারে বিক্রি হয়েছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ২২ ডলারের কিছু বেশি। কমেছে ৮ শতাংশের বেশি। জ্বালানি পণ্য দুটির এ রেকর্ড দরপতন বৈশ্বিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ আরো জোরালো করবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
রয়টার্সের প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বশেষ কার্যদিবসে ডব্লিউটিআইয়ের দাম ব্যারেলে ১ ডলার ১৬ সেন্ট কমেছে। দিন শেষে এপ্রিলে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ২০ ডলার ৩৫ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম। গত ১৮ বছরের মধ্যে এদিন জ্বালানি পণ্যটির দাম সর্বনিম্নের কাছাকাছি নেমে এসেছে। কারণ দিনের শুরুতে ডব্লিউটিআইয়ের ব্যারেল ১৯ ডলার ৯২ সেন্টে নেমেছিল।
একই চিত্র দেখা গেছে ব্রেন্ট ক্রুডের দামেও। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম কমেছে ব্যারেলে ২ ডলার ৭ সেন্ট। দিন শেষে এপ্রিলে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড বিক্রি হয়েছে ২২ ডলার ৮৬ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ কম। ২০০২ সালের নভেম্বরের পর বর্তমানে জ্বালানি পণ্যটি সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, রেকর্ড দরপতনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী। চীনের পর ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপের দেশগুলো, এরপর যুক্তরাষ্ট্রকে নাড়িয়ে দিয়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। লকডাউনের আওতায় এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার ৩০০ কোটির বেশি মানুষ কার্যত ঘরবন্দি। স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এরই মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ পরিস্থিতিতে চাহিদা হ্রাস জ্বালানি তেলের দরপতন ঘটিয়েছে।
একই সঙ্গে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে সৌদি আরব ও রাশিয়ার মধ্যকার মূল্যযুদ্ধ। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে জ্বালানি তেলের উত্তোলন আরো কমিয়ে আনার সৌদি প্রস্তাব ক্রেমলিন প্রত্যাখ্যান করায় এ মূল্যযুদ্ধের সূচনা। সহসাই এ বিরোধ দূর হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। তাই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে মন্দা ভাব বজায় থাকতে পারে।
এ বিষয়ে টোকিওভিত্তিক রাকুটেন সিকিউরিটিজের পণ্যবাজারবিষয়ক বিশ্লেষক সাতোরু ইয়োশিদা বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর দ্রুত লাগাম টানা সম্ভব না হলে জ্বালানি তেলের বাজারে বিদ্যমান টালমাটাল অবস্থা দূর করা কঠিন হবে। আগামীতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ২০ ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে। এমনকি ডব্লিউটিআইয়ের ব্যারেল কমে ১৭ ডলারে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০১ সালের পর জ্বালানি পণ্যটি এত কম দামে বিক্রি হয়নি।
সাতোরু ইয়োশিদার মতে, মন্দা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক নীতি শিথিল করেছে। কমিয়েছে বিদ্যমান সুদহার। এ পরিস্থিতি জ্বালানি তেলের বাজারের অনিশ্চয়তা আরো জোরালো করেছে।
জ্বালানি তেলের বাজার ভারসাম্য ফেরাতে সৌদি আরব ও রাশিয়াসহ ওপেক-নন ওপেক দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক একান্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন জাপানি বিশ্লেষক সাতোরু ইয়োশিদা। তবে বাস্তবে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সম্প্রতি সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের বাজার ভারসাম্য ফেরাতে ও দাম আরো না কমানোর জন্য রিয়াদের ওপর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে এখনই কোনো আলোচনায় বসা হবে না।
সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে রাশিয়া। দেশটি ওপেক প্লাস জোটের পরিধি বাড়াতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে। রাশিয়ার সভেইন ওয়েলথ ফান্ডের প্রধান কিরিল দিমিত্রেভ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর বিদ্যমান কালো ছায়া দূর করতে জ্বালানি তেলের দাম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়াতে হবে। আর এজন্য সবার আগে প্রয়োজন ওপেক ও ওপেক প্লাসের পরিধি বড় করা।