পুরান ঢাকায় রুটির কেজি ৩৫০, হালুয়া ২৫০ টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড দিয়ে চক সার্কুলার রোডে ঢুকতেই সুস্বাদু হালুয়া-রুটির ম–ম ঘ্রাণ। টেবিলে পসরা সাজিয়ে রাখা বাহারি নকশার রুটি। ১০০ গ্রাম থেকে শুরু করে পাঁচ কেজি পর্যন্ত ওজন। সঙ্গে রয়েছে নানান উপকরণের সুস্বাদু হালুয়া এবং দেশি ফল। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে শুক্রবার (১৮ মার্চ) পুরান ঢাকার চক সার্কুলার রোডে এই হালুয়া-রুটির পসরা সাজিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। শবে বরাতে বিশেষ ধরনের খাবারের এই আয়োজনের রেওয়াজ বহুদিনের। যদিও একসময় ঘরে ঘরে চাল বা আটার রুটির সঙ্গে হালুয়া তৈরি হতো। এখন ব্যতিব্যস্ত নাগরিক জীবনে হাতে রুটি তৈরির ঝক্কি এড়াতে বেকারির রুটি-হালুয়াই ভরসা।


পুরান ঢাকার বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে শবে বরাতের দিনটি বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালন করছেন তারা। নামাজ রোজার পাশাপাশি ঘরে ভোজের আয়োজন এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বুটের ডাল, সুজি বা মৌসুমি গাজরের হালুয়া-রুটি পাঠান। এতে আত্মীয়তার বন্ধন আরও দৃঢ় করে। উর্দু রোডের প্রবীণ বাসিন্দা সালমান বিন ওমর বলেন, পুরান ঢাকায় ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি খানাপিনা ও আনন্দ–উৎসবের মধ্য দিয়ে বহুকাল থেকে শবে বরাত পালন করা হয়। প্রত্যেকে সামর্থ্য অনুযায়ী বাসায় বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করেন।আত্মীয়ের বাড়িতে রুটি-হালুয়া, ফল পাঠান। অনেকে নতুন পোশাক পরেন। ফলে পুরান ঢাকায় শবে বরাত পালন ঐতিহ্যের অংশ বলে মনে করেন অনেকে। শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই চক সার্কুলার রোডে টেবিল পেতে হালুয়া রুটির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। বেলা ১১টার পর থেকে দু-একজন করে ক্রেতা আসতে শুরু করেন। জুমার নামাজের পর পুরো চক সার্কুলার রোডে ক্রেতাদের চাপ বাড়ে। দরদাম করে কেনাকাটা করেন ক্রেতারা। এর মধ্যে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে রুটি বিক্রি হচ্ছে। ছোট ছোট বাটিতে হরেক রকম সুস্বাদু হালুয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। এছাড়া দেশি ফল তরমুজ, পেঁপে, পেয়ারা, বেল, আনারস, বরইয়ের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।


হাজারীবাগে মেয়ের জামাইয়ের বাড়িতে হালুয়া-রুটি পাঠানোর জন্য চক সার্কুলার রোডে কেনাকাটা করতে এসেছেন খাজে দেওয়ান প্রথম লেনের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন। তিনি  বলেন, ‘মাইয়া বাপের বাড়ি থাকন কালে শবে বরাতে হালুয়া রুটি খাইতো। এহন শ্বশুরবাড়িতে হালুয়া রুটি পাঠাতে কইছে। যদিও এইটা আমগো ঐতিহ্য’। শহীদ নগরের প্রবীণ বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। চক বাজার থেকে দুই কেজি ওজনের একটা রুটি কিনে বাসায় ফিরছিলেন। আলাপকালে বলেন, শবে বরাতে বাসার সবার পছন্দের খাবার হালুয়া রুটি। আগে বাসায় এগুলো তৈরি করতো। কিন্তু বাজার থেকেই কিনে খাই। হালুয়া-রুটির দোকানি মো. মারুফ জাগো নিউজকে বলেন, সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার বেশি বেচাকেনা হয়েছে। মূলত জুমার নামাজের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এখানে বেচাকেনা হয়। আশা করি, দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা করা যাবে। তিনি বলেন, আমার দোকানে বিশেষ নকশা করা রুটি আছে। এরমধ্যে মাছের নকশা রুটি বেশি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ৩০০ টাকা। কেউ বেশি কিনলে কিছুটা দাম কম রাখা হয়। পশ্চিম ধানমন্ডির বেকারি ছায়ানীড়। শবে বরাত উপলক্ষে তারাও চক সার্কুলার রোডে শাহী মসজিদের সামনে হালুয়া-রুটির দোকান বসিয়েছেন। এই দোকানেও ৩০০ টাকা কেজিতে রুটি বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে মধুবন রুটির কেজি ৩৫০ টাকা। এছাড়া গাজরসহ বিভিন্ন ধরনের হালুয়া ২০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। চক বাজার ঘিরে আনন্দ কনফেকশনারি, আলাউদ্দিন সুইটস, বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কাবাব, রায়সাহেব বাজার এলাকার ইউসুফ বেকারি, বংশালের আল-রাজ্জাক কনফেকশনারিতে খাবারের চাহিদা বেশি। সেখানেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।