মহান স্বাধীনতা দিবস

0

মহান স্বাধীনতা দিবস আজ। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিদের শাসন প্রতিষ্ঠার তীব্র আন্দোলনে পর্যদস্তু হয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে জাতি দিশাহারা হয়ে পড়ে এবং এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুক্তিকামী বাঙালীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এরপর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেই সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়েই আজ আমরা স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক। এই মহান দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে জানা-অজানা শহীদ ও বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের সাফল্যের সেই মহিমা নিরন্তর জাতিকে জুগিয়ে যাচ্ছে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ানোর প্রেরণা। তবে দুর্ভাগ্য এবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ছোবলের শিকার হয়েছে মহান স্বাধীনতা দিব্সরে অনুষ্ঠান। কোটি মানুষের প্রাণের প্রশ্নে বন্ধ করা হয়েছে যাবতীয় আয়োজন। স্মৃতিস্তম্ভে ঢুল েিদয় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনও বন্ধ রয়েছে। তারপরও মানুষ হৃদয়ে স্মরণ ও পালন করছে সবই। মুক্তিকামী মানুষ যে উদ্দেশ্য নিয়ে ৪৯ বছর আগে জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার স্বপ্ন রূপায়িত করেছিল, সেই উদ্দেশ্য আ অপূর্ণ বলা হচ্ছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা, উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে আবারও সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে লিপ্ত হবে। আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি মহাসচিব পৃথক বিবৃতি দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
আমরা বিশ্বাস করি, ২৬ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন; এদিন অর্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার শপথ নিয়ে ফিবছর ক্রমাগত সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দিনও এটি। মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ন্যায় বিচার মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য। মাানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ন্যায় বিচার আবাসনসহ সার্বিক মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তভাবে বাঁচার অধিকার অর্জন। কিন্তু স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অর্জনে ৪৯ বছর পার হলেও এখনও পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কাক্সিত সাফল্য পায়নি। দারিদ্র্যবিমোচনসহ সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনধারা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি গত প্রায় ৫ দশকেও। স্বাধীনতার স্বাদ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার যে প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছিল একাত্তরে তা আজও রয়ে গেছে ঘেঘাষণা। আর দাবির মাঝেই। গত প্রায় এক দশক মানুষ হারিয়েছে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ। যা ছিল ’৭১ এর জন্মের আন্দোলনের মূল কথা।
আমরা জানি দেশে আজ গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত বাকস্বাধীনতা, পরমত সহিষ্ণুতা এবং বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে এক কাতারে দাঁড়ানোর অনুকূল পরিস্থিতি নেই। স্বাধীনতা দিবস ও মুক্তিযুদ্ধের মর্মবাণী স্মরণ করে এই অবস্থার অবসান এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন বিকল্প নেই। দেশ ও জাতির স্বার্থে এটা অত্যন্ত জরুরি। আমরা জানি, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান কেউই স্বাধীন দেশে এমন পরিবেশ কল্পনাও করেননি। শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারাও কোন অনৈক্যের বা বাকস্বাধীনতার অভাবের কথা ভাবেননি। সে কারণে আমরা চাই বঙ্গবন্ধু , ভাসানী, জিয়া ও শহীদদের স্বপ্নের দেশ হোক বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মুজিব শতবার্ষিকীতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সকল দল ও নেতাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন। আমরা তার সাফল্য কামনা করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। দেশ করোনামুক্ত ও স্বাধীনতা অমর হোক।