আজ সেই ভয়াল কালরাত

0

পঁচিশে মার্চ, সেই ভয়াল কালরাতের স্মৃতি এখনো আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এই রাতেই ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিদের ওপর ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল রাতভর। সেই রাতে তারা ঢাকায় যে গণহত্যা শুরু করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস সারা দেশেই তা চালিয়ে গেছে। ৩০ লাখ বাঙালির প্রাণ গেছে সেই গণহত্যায়। তিন লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীরা, যারা বাঙালি নামের কলঙ্ক হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অগণিত বাড়িঘর। এ সবই মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ। তাদের সেই অপরাধের অসংখ্য প্রমাণও রয়েছে। সারা বিশ্বে সেদিন প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। বহু বিশ্বনেতা সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য যে স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পর গণহত্যাকারী পাকিস্তানি বাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের বিচার শুরু করলেও দায়ী পাকিস্তানি সেনাদের বিচারের আওতায় আনতে পারিনি।
৯ মাসের রক্তয়ী যুদ্ধের পর বাঙালির অসীম তেজের কাছে সেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় হয়েছিল। পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের ফিরিয়ে আনার স্বার্থে ত্রিপীয় চুক্তির মাধ্যমে আত্মসমর্পণকারী ৯৫ হাজার পাকিস্তানি সেনাকে ফেরত দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের কাছে। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, যুদ্ধাপরাধের দায়ে চিহ্নিত ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার বিচার পাকিস্তানের আদালতে করা হবে। পাকিস্তান সরকারেরই নিয়োগ করা হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনেও তাদের অপরাধের স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান তাদের বিচার না করে সেই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। পাকিস্তানের চুক্তি ভঙ্গের পরও আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি, আন্তর্জাতিক আদালতেও যেতে পারিনি। তার একটি বড় কারণ ছিল ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পাকিস্তানি ভাবধারার লোকজনের হাতে দেশের মতা চলে যাওয়া। সেই ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার অনেকেই এখনো জীবিত। আমরা এখনো তাদের বিচারের উদ্যোগ নিতে পারি। আইনমন্ত্রী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। আমরা চাই দ্রুত সেই পদপে নেওয়া হোক।
পাকিস্তান যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল, তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। পৃথিবীতে কোনো গণহত্যা লিখিত আদেশে না হলেও বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল জেনারেল রাও ফরমান আলীর লিখিত আদেশনামার ভিত্তিতে। ২৬ মার্চ যে ১৯ জন বিদেশি সাংবাদিককে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা প্রায় সবাই সেই রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পুরো ৯ মাসই ছিল গণহত্যার নানা প্রতিবেদন। ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশনের গবেষক ড. জেফরি ডেভিস তাঁর গবেষণার ভিত্তিতে বলেছেন, পাকিস্তানি সেনাদের হাতে চার লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে। আমাদের নিজস্ব গবেষণার তথ্য তো আছেই। সেসব তথ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ কখনো তামাদি হয় না। আমাদের বিচার চাইতেই হবে এবং তা করতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে।