আট বছরেও অগ্রগতি নেই !

0

সমুদ্রসম্পদ আহরণে ও ব্যবহারে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছে। দীর্ঘ আট বছর আগে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছ থেকে এক লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটারের সমুদ্রসীমার অধিকার লাভ করেছিল। পরবর্তীকালে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমারও মীমাংসা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের অধিকারে এখন গভীর সমুদ্রসহ এক বিশাল সামুদ্রিক অঞ্চল রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এখানে গভীর সমুদ্রের মাছসহ যে পরিমাণ সমুদ্রসম্পদ রয়েছে তার কিয়দংশ ব্যবহার করা গেলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, গত আট বছরে এ েেত্র অগ্রগতি হয়েছে খুবই কম। আমরা শুনে আসছি, সমুদ্রের তলদেশে বিপুল গ্যাস তেল ছাড়াও রয়েছেন মহামূল্যবান ইউরেনিয়াম। কিন্তু তা উত্তোলনে কোন খবর কেউ পাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা এ জন্য মূলত দায়ী করছেন আমাদের সীমাবদ্ধতা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয়হীনতা এবং দ জনবলের অভাবকে। জনবল সৃষ্টির কিছু উদ্যোগ থাকলেও সেগুলো বাস্তবেেত্র কতটা কাজে আসবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগানোর েেত্র আমাদের এমন ধীরগতির কারণ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছড়াচ্ছে। এটা ছড়ানো খুবই স্বাভাবিক, আমরা জানি, ২০১২ সালের ১৪ মার্চ মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর দেশব্যাপী মানুষ উচ্ছ্বসিত হয়েছিল। সরকারের প থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে এ অর্জনকে তুলে ধরা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রত্যাশার জন্ম হয়েছিল। কিন্তু আট বছরেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় মানুষের প্রত্যাশা হোঁচট খাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের গবেষণায় এ েেত্র বাংলাদেশের ব্যর্থতার বেশ কিছু কারণ উঠে এসেছে। এর মধ্যে প্রথমেই আছে সমন্বয়হীনতা। সমুদ্রসীমা নিয়ে কাজ করছে ১৭টি মন্ত্রণালয় ও ১২টি সংস্থা। কিন্তু তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় ফলপ্রসূ অগ্রগতি নেই বললেই চলে। দ্বিতীয় কারণ প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি না থাকা। প্রযুুক্তি সংগ্রহে কার্যকর উদ্যোগেরও অভাব রয়েছে। তৃতীয় কারণ, প্রয়োজনীয় গবেষণার অভাব। এই সমুদ্রসীমায় কী ধরনের সম্পদ আছে, তার সঠিক জরিপও এখন পর্যন্ত করা যায়নি। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে দ মানবসম্পদের অভাব, সামুদ্রিক বিশেষ পরিকল্পনার (এসএসপি) অভাব এবং নজরদারি ও মূল্যায়ন কাঠামোর ঘাটতি।
বাংলাদেশ অত্যন্ত ছোট একটি ভূখণ্ড, অথচ রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা। স্বাভাবিকভাবেই সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অথচ গত আট বছরে কোন অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।