যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল : ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ধোপার কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে চলছে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ধোপার কাজ। তাকবির এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দামোদার, ফুলতলা বাজার, খুলনা এই ঠিকানা ব্যবহার করলেও বাস্তবে ওই স্থানে এই নামে কোন ধোপার প্রতিষ্ঠান নেই। এদিকে নামমাত্র কাপড় পরিষ্কার করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে তিন লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের কাজের মান নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করে হিসাব রক্ষক ই¯্রাফিল আলম মেসার্স তাকবির এন্টারপ্রাইজ নামের ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার পর ই¯্রাফিল আলম নিজেও এ কাজের সাথে জড়িত আছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে হাসপাতালের ময়লা কাপড় ধোলাইয়ের জন্য তাকবির এন্টারপ্রাইজ নামের ওই প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৬/০৮/২০২৩ তারিখ থেকে কার্য্যাদেশ কার্যকর হয়। দরপত্রে উল্লেখ ছিল ময়লা কাপড় ধোলাইয়ের ক্ষেত্রে পৌরসভা/ ইউনিয়ন কর্তৃক স্বীকৃত লন্ড্রির মালিক মর্মে প্রত্যয়ন এবং যে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতার সনদপত্র দাখিল করতে হবে। একই সাথে যে কোন স্থানে বাস্তবে লন্ড্রির ব্যবসা থাকতে হবে।
কিন্তু বাস্তাবে মেসার্স তাকবির এন্টারপ্রাইজ নামের কোন ধোপার প্রতিষ্ঠানই নেই।
এই প্রতিবেদক বিষয়টি খুলনার ফুলতলায় যাচাই করেন। সরেজমিন তদন্তে দেখা যায়, মেসার্স তাকবির এন্টারপ্রাইজ নামে দামোদর, ফুলতলা বাজার,খুলনা ঠিকানায় কোন ধোপার প্রতিষ্ঠান নেই। এই নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে- যারা বিভিন্ন হাসপাতালে স্টেশনারি মালামাল সরবরাহ করে। তাদের কোন লন্ড্রির ব্যবসা নেই।
এদিকে গতকাল শনিবার এই প্রতিবেদক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইনচার্জের সাথে কথা বলেন। তারা অভিযোগ করেন, আনিচ ও তুহিন নামে দুজন বর্তমানে কাজটি করছে। তারা ধোপার কাজ নিয়ে এই প্রতিবেদককে অসন্তুষ্টির কথা জানান। তারা বলেন, যে ময়লা কাপড় পরিষ্কারের জন্য দেয়া হয়, সেগুলো যথাযথ পরিস্কার না করে পুনরায় পাঠানো হয়। এমনকি পরিস্কারের পর আয়রন করে পাঠানোর কথা থাকলেও অনেক সময় সেটি না করেই ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এসময় তারা ধোপা থেকে পরিস্কার হয়ে আসা কয়েকটি কাপড় এই প্রতিবেদককে দেখান। যাতে আয়রন করা নয় এবং রয়েছে ময়লার দাগ।
এ বিষয়ে যশোর-২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও ) আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ধোপার কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। তাৎক্ষণিক পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, শুনেছি ধোপার কাজের সাথে হাসপাতালের এক্স, ওয়াই জেড জড়িত। তবে প্রকৃত অর্থে হাসপাতালের কেউ যদি নেপথ্যে থেকে ধোপার কাজে জড়িত থাকে, তাহলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ।’
এদিকে মেসার্স তাকবির এন্টারপ্রাইজ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘আমি ধোপার কাজ করিনা। তুহিন ভাই করে।’
সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই তিনি সূর বদলে বলেন, আমরা পার্টনারশিপে এই ব্যবসা করি।
এদিকে ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করা আনিছ ও তুহিনের সাথে এই প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে কথা হয়। তারা বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনে ওয়াশ হাউজ নামে তাদের একটি ধোপার প্রতিষ্ঠান আছে। সেখান থেকে যশোর-২৫০ শয্যা হাসপাতালের ময়লা কাপড় ধোলাই করে সরবরাহ করা হয়।
ধোপার কাজের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের হিসাব রক্ষক ই¯্রাফিল আলম বলেন, আমি তাদের চিনি না। তারা প্রতিষ্ঠানে বিল সাবমিট করে, বিল উত্তোলন করে। এর বাইরে তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।