চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদে বৃটিশদের তৈরি ভাঙা ব্রিজটি ইতিহাসের সাক্ষী

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার পাশ দিয়ে বয়ে চলা কপোতাক্ষ নদে আজও ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে বৃটিশদের তৈরি ব্রিজের ধ্বংসাবশেষ। নদ খননের কারণে ঐতিহাসিক এই স্থাপনা থাকবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এটিকে সংরক্ষণ করা জরুরি এমনটিই মন করছেন সচেতন মহল।
চৌগাছা পৌর সদরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ। বৃটিশ শাসনামলে খর¯্রােতা কপোতাক্ষ নদ পারাপারের জন্য বর্তমান বড় মাছ বাজারের নিচে নির্মাণ করা হয় একটি সুবিশাল ব্রিজ। জনশ্রুতি আছে কপোতাক্ষের প্রবল ¯্রােতের কারণে ইট আর চুন সুড়কি দিয়ে নির্মিত ব্রিজ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি, ¯্রােতের দাপটে তা উপড়ে যায়। নদের পশ্চিম পাশে ব্রিজের অবশিষ্ট আজও বিদ্যামন। নদ খননের ফলে ব্রিজের ভাঙা অংশ থাকবে কিনা দেখা দিয়েছে সংশয়।
তারিনিবাস গ্রামের বয়োবৃদ্ধ ফজলুর রহমান, কংশারীপুর গ্রামের দামোদার আলী, স্বরুপদাহ গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, কপোতাক্ষ নদ তথা নদের ভাঙা ব্রিজ এখন শুধুই স্মৃতি। দেশ স্বাধীনের পরেও আমরা দেখেছি কপোতাক্ষে অঢেল পানি। তারও আগের কথা বর্তমানে যেখানে ব্রিজটি ভেঙে আছে সেখানে একটি দোয়া আছে। সচারচার মানুষ স্থানটিতে যেতেন না। জেলেরা মাছ ধরতে গেলেও দোয়ার পাশ দিয়ে চলাচল করতো। বাবা দাদাদের মুখে শুনেছি বৃটিশরা তাদের সুবিধার্থে দোয়ার পাশ দিয়ে ওই ব্রিজটি নির্মাণ করেন। কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয়নি, পানির ¯্রােতের দাপটে ব্রিজ উপড়ে যায়। এরপর বর্তমানে চৌগাছা ব্রিজের সন্নিকটে খেয়া পারাপার শুরু হয়। বর্ষা মৌসুমে কংশারীপুর মহল্লা ছাড়িয়ে যেত পানি। সেখান থেকে মানুষ খেয়া পারাপার হতেন। নদের ওই সময়ের কাক চক্ষু পানি আর মাছের সমাহার আজ শুধুই অতীত।
পৌরসভার কালিতলা মহল্লার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, আব্দুর রশিদ, রবিন্দ্র নাথ বলেন, কপোতাক্ষ নদ তার যৌবন বহু আগেই হারিয়েছে। এখন নদ খনন চলছে, দেখে বেশ ভালই লাগে। নদটি যদি পরিপূর্ণ খনন হয়, তাহলে এর হারানো যৌবন হয়ত ফিরে আসবে না তবে কিছুটা হলেও সকলের কাছে ভাল লাগবে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তারা বলেন, বৃটিশদের শাসন শোষণের সময় চৌগাছাতে তারা অনেক কিছুই নির্মাণ করেন। তারমধ্যে ছিল কপোতাক্ষের ব্রিজ। কিন্তু পানির ¯্রােতের কারণে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি এমনটিই শুনেছি। ব্রিজের যে ভাঙা অংশটুকুও আজও দৃশ্যমান এটি সংরক্ষণ করা জরুরি কেননা এই ধ্বংসাবশেষ থেকে আগামী প্রজন্ম আনেক কিছুই জানতে বা শিখতে পারবে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বৃটিশরা সমগ্র বাংলার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ এবং ১৭৬৪ সালে বক্্রারের যুদ্ধের পর কোম্পানি বাংলায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। বাংলায় বৃটিশদের লুন্ঠনক্রিয়া তৎকালীন ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। বাংলা থেকে নিয়ে যাওয়া পূঁজি ব্রিটেনের বিভিন্ন শিল্পে, বিশেষ করে বস্ত্র শিল্পে তারা বিনিয়োগ করে। এরফলে বাংলায় শিল্পায়ন ব্যাহত হয় এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময়ে বাংলাকে দু ভাগে ভাগ করা হয়। বাংলার পশ্চিম অংশ ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র রুপে আত্মপ্রকাশ করে।
চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নুর উদ্দিন আল মামুন হিমেল বলেন, যেহেতু কপোতাক্ষ নদের পশ্চিম পাশে আমরা একটি শিশুপার্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। সে জন্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে ভাঙা ব্রিজ নদে রাখার ব্যাপারে আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।