সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাক

0

প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার ভয়ে যখন বিশ্বময় আতঙ্ক, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে দুশ্চিন্তা বিষাদের ছায়া- তখন দেশের টাইগাররা দিলো আনন্দের বন্যা। ক্ষণিকের জন্য হলেও সীমিত ওভার, টেস্ট ম্যাচ এবং টি-টুয়েন্টি, সবগুলো শাখায় কোন দলকে পরাস্ত করাÑ এমন অর্জন অভূতপূর্ব। নিজেদের দেশের মাটিতে একদা সমীহ জাগানো প্রতিপ ক্রিকেটশক্তি জিম্বাবুইয়েকে নাস্তানাবুদ করে ক্রিকেটের সব ধরনের ফরম্যাটে হারিয়ে দিয়েছে আমাদের দামাল ছেলেরা। অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দেশবাসীকে স্বস্তি, তৃপ্তি আর গৌরব দানের জন্য টাইগারদের অভিবাদন। এটিকে আমরা সেরা অর্জন হিসেবেই বিবেচনা করব। এটি নতুন ইতিহাস গড়া। ইতিহাস বলে একযুগ আগে বাংলাদেশ তিন ফরম্যাটের সিরিজ খেলা শুরু করেছিল প্রথম। প্রতিপ ছিল দণি আফ্রিকা। বিগত ১২ বছরে কুড়িটির মতো এ জাতীয় প্রতিযোগিতায় নেমে প্রথমবরের মতো সব ফরম্যাটে সফলতার মুখ দেখল টাইগাররা। অবশ্য একই প্রতিপ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বছর দুই আগেও এমন অসাধারণ অর্জনের সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টি-টুয়েন্টি সিরিজে হেরে যাওয়ায় সোনার হরিণ অধরাই ছিল। এবারে এলো সেই বহু প্রতীতি সাফল্য।
এই ধারাবাহিক তিন সিরিজের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের েেত্র এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের নবায়নও ঘটল। তামিম ইকবালের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা লড়াকু ব্যাটসম্যানও ফিরে পেলেন তার নিজস্ব ছন্দ। লিটন দাসের মতো তরুণ লড়াকু ক্রিকেটারকেও এই সিরিজের মাধ্যমে চিনে নিল ক্রিকেটবিশ্ব। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ (১৭৬) রানের রেকর্ড গড়লেন লিটন দাস। পৃথিবী দেখল সৌম্য সরকারের দানবীয় ব্যাটিং স্পৃহা মরেনি।
জিম্বাবুইয়ে দলকে সমীহ করার কিছু ছিল না। তবু তাদের কাছে নিকট অতীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আশাহত হয়েছে। দেশের কিংবদন্তিতুল্য সাফল্য দেখানো অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বের শেষ সিরিজও ছিল এটি। তাই নানা বিচারে জিম্বাবুইয়ের বিপে এই সিরিজ বাংলাদেশের জন্য স্মৃতিবহ। আমরা ভুলে যাচ্ছি না বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কথা। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টি-টুয়েন্টি সিরিজে এখন সবচেয়ে বেশি উইকেট অর্জনের নায়ক মুস্তাফিজুর রহমান। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি টপকে গেলেন সাকিব আল হাসানকে। তবে ফিল্ডিংয়ের েেত্র এখনও যে টাইগারদের দুর্দান্ত কিছু নেই, বড় সাফল্য পেতে বিশেষ কিছু করে দেখাতে হবে এই ভাবনা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
সব মিলিয়ে সফল এক সিরিজ পার করল বাংলাদেশ। হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে দল। তবে আত্মতৃপ্তি আর আনন্দের আতিশয্যে ভেসে যাওয়ারও কিছু নেই। বিশ্বক্রিকেটে আজ অনেকটাই দুর্বল দল জিম্বাবুইয়ে। একটুখানি আপে থেকে গেছে দ্বিতীয়টি-টুয়েন্টি ম্যাচে ১০ উইকেটে জিম্বাবুইয়েকে না হারাতে পারা। পারলে সেটাও হতো অনন্য এক রেকর্ড। আমরা চাই শক্তিধর দলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করুক টাইগাররা। আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ দল এভাবেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে থাকা। অনেক অশান্তি, দুশ্চিন্তা আর অনাটনের মাঝেও দেশবাসী তৃপ্তির হাসি হাসুক ক্ষণিকের জন্য হলেও আনন্দে আত্মহারা হোক।