সম্পদের হিসাব দাখিল কার্যকর হোক

0

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। সরকার দীর্ঘদিন পর হিসাব দাখিলের কথা বলছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এ বলা হয়েছে, পাঁচ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের বিবরণী তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। বাস্তবে এই নির্দেশনা প্রতিপালিত হতে দেখা যায় না। নির্দেশনা কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারের গরজও তেমন একটা পরিলক্ষিত হয় না। ২০০৮ সালের দিকে প্রথমবারের মতো সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ-সম্পত্তির হিসাব নিতে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের তরফে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তাও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তখন সরকারি কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন দাখিল যখন বাধ্যতামূলক এবং প্রতি বছরই রিটার্নের সঙ্গে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হয়, তখন পাঁচ বছর অন্তর পৃথকভাবে সম্পদবিবরণী দিতে হবে কেন? এই প্রশ্নের যথাযথ মীমাংসা না হওয়ায় সরকারি ওই উদ্যোগ থেমে যায়। সম্প্রতি সরকার নতুন করে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিধি অনুসরণের তাকিদ দিয়েছে। গত ২৪ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে বলেছে, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালায় কর্মচারীদের স্থাবর সম্পত্তি অর্জন, বিক্রি এবং সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার যে নির্দেশনা রয়েছে, তা যাতে অনুসৃত হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এমতাবস্থায়, বিধিগুলো পুঙ্খানুপঙ্খভাবে প্রতিপালনে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট বা সম্পত্তি কেনা ও বিক্রী এবং সম্পত্তি অর্জনের অনুমতির জন্য আবেদনপত্রের একটি নমুনা ফরম এবং বিদ্যমান সম্পদ বিবরণী জমার ছকও দেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহল প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা ও সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এতদিন বিধিমালা বাস্তবায়িত না হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বাস্তবায়িত হলে সরকারি অফিসগুলোতে যেমন শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত হতো, তেমনি দুর্নীতি কমতো।
পাঁচ বছর অন্তর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিধান বাস্তবায়িত হলে সরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য কমবে, তাতে সন্দেহ নেই। কারো আয়ের অতিরিক্ত অর্থ ও সম্পদ দৃষ্ট হলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে এবং সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই ভয়ে অনেকেই ঘুষ-দুর্নীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে বাধ্য হবে। সম্পদ বিবরণী পেশ করলেই হবে না, তা সঠিক কিনা সেটা যাচাইয়ের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। তা না হলে সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার কোনো মানেই হবে না। সকল সরকারি কর্মচারী জনগণের সেবক হিসেবে গণ্য। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নির্বাহ হয়ে থাকে। নিয়োগদাতা সরকারের কাছেই শুধু নয়, জনগণের কাছেও তাদের জবাবদিহি করার বাধ্যবাদকতা রয়েছে। অথচ, তাদের একাংশ জনগণকে তুচ্ছজ্ঞান করে, হেয়প্রতিপন্ন করে। একই সঙ্গে তাদের নগদ পুঁজি মনে করে। যতভাবে পারে তাদের কাছ থেকে অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়। আর সুযোগ মতো সরকারি অর্থ লুটপাট করে। এদের রাস টেনে ধরাই শুধু জরুরি নয়, শক্ত জবাবদিহির আওতায় আনাও আবশ্যক।