প্রথম শ্রেণির আগে আরো তিনটি কাস ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চাপানো হচ্ছে একই বই #শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য-১

0

মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস ॥ শিশু শিক্ষার্থীদের বই’র বোঝা কমাতে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিলেও তা মানছে না কিন্ডার গার্টেন (কেজি) স্কুলগুলো। অতিরিক্ত কাস খুলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সদ্য পা রাখা শিশুদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বই খাতার বিরাট বোঝা।  অভিভাবকদের মধ্যেও ক্রয় ক্ষমতার প্রতি ন্যূনতম বিচার বিবেচনা না করেই তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে উচ্চমূল্যের বই-খাতার তালিকা। এই তালিকা কার্যকর এবং প্রতিষ্ঠানের বেতন ও কোচিং টিউশন ফি যোগাতে গিয়ে কার্যত শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়ছে অভিভাবকরা। এতে শিশুরা যতোটা উপকৃত হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মালিক ও বই ব্যবসায়ীরা। সুবিধাভোগীরা এভবেই শিক্ষাকে বাণিজ্যমুখি করে তুলেছে। শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই বোঝা কমাতে উচ্চ আদালত একবছর আগে নির্দেশনা দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীও বই ও পরীক্ষা কমিয়ে লেখাপড়ার চাপ কমাবার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে আসছেন। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলো শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখলেও বেশিরভাগই পরিচালিত হচ্ছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণির আগেই তাদের তিনটি কাস রয়েছে। যা প্লে, নার্সারি ও কেজি নামে পরিচিত। তিনটি কাসের বই লেখক, প্রকাশক ও নাম ভিন্ন। কিন্তু পাঠে কোন ভিন্নতা নেই। অংক, বাংলা, ইংরেজি, অংকন প্রায়ই একই। চোখ ধাঁধাঁনো মোড়ক ও প্রচ্ছদ লাগিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই বিষয় পড়ানো হচ্ছে তিন কাসে। এভাবে তিনটি বছর পার করার পর শিশুরা প্রথম শ্রেণিতে উঠে পাচ্ছে বোর্ডের বই। যা পূর্বে পঠিত বই-এর চেয়ে সহজ। শিশুদের মেধা ও ধারণ ক্ষমতা বিবেচনা করেই বোর্ড বই সাজানো হয়েছে। কেজি স্কুল এটা বিবেচনা না করে কোমলমতি শিশুদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে আরও তিনটি কাস ও অতিরিক্ত বই-খাতার বোঝা। এতে শিশুরা অল্প বয়সে শারীরিক ও মানসিক চাপের মুখে পড়ছে এবং প্রথম শ্রেণির বোর্ড বই হাতে পেয়ে হুছোট খাচ্ছে।
যশোর শহরের প্রথম সারির কেজি স্কুল অক্ষর শিশু-শিক্ষালয়। উদীচী পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠান শিশুদের তালপাতায় লিখিয়ে হাতে খড়ি দেয়।
এক সময় এমন বিনামূল্যের উপকরণ ব্যবহার করে প্রাচীন মানুষের লেখাপড়া শিখেছেন। অক্ষর স্কুল কর্তৃপক্ষ সেটিই স্মরণ করে দিয়েছেন নতুন প্রজন্মকে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তাদের এই মহতি চেতনা স্কুল পর্যন্ত। যাদের তালপাতায় লেখার অনুশীলন দেয়া হলো, তাদের হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে। সাতটি বই ও নয়টি খাতা। এছাড়াও রয়েছে ব্যাচ, টাই ডায়েরি। এমন তালিকা শুধু অক্ষর শিশু শিশু শিক্ষালয়ের নয়। সকল কেজি স্কুলেই প্রথম শ্রেণির আগে তিনটি কাস খুলে বই খাতা এমনকি কলম-পেন্সিলের তালিকা করে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। যা অল্প বয়সী শিশুদের পক্ষে বহন করা কষ্টকর। ভারি বই মূলত: তাদের অভিভাবকরাই বহন করে থাকেন। প্রথম শ্রেণি থেকে ওপরের কাসগুলোতে বিনামূল্যের সরকারি বই দেয়া হলেও তার সাথে যুক্ত করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকাশনীর নামী-দামী বই ও গাইড।
সহায়ক বই নামে এগুলো শিক্ষার্থীদের কিনতে ও পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ও এ থেকে বাদ যাচ্ছে না। সন্দীপন পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল কাসেই বোর্ড বই-এর বাইরে অতিরিক্ত ৫/৬টি বই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত কাস ও বই তালিকাভুক্তির নেপথ্যে রয়েছে বাণিজ্য। বই ব্যবসায়ী শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক সমিতি যৌথভাবে এই বাণিজ্যিক সুবিধা নিচ্ছে।
কোমলমতি শিশুদের কাঁধে অতিরিক্ত বই-খাতা চাপানোর বিষয়ে জানতে চাইল যশোর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান এটা করছে। প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বই পাঠ্য তালিকাভুক্ত করে তারা শিক্ষাঙ্গণে সদ্য পা রাখা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক চাপের মুখে ফেলছে। অতিরিক্ত বই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনার কথার সাথে আমিও একমত। এটা নিরসন হওয়া উচিত।