যশোরে ৭ মাসে ৭২ জনের প্রাণহানি, ১৪টি পরিবার পেয়েছে আর্থিক সহায়তা

সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারি সহায়তার কথা জানে না সাধারণ মানুষ

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ।। প্রতিদিনের খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র। ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ, ভেঙে যাচ্ছে পরিবার। এই দুঃসময়ে সরকার যে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে পারে, সে খবরটিই অনেকের কাছে অজানা।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ট্রাস্টি বোর্ড সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে বহু ভুক্তভোগী পরিবার তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৫৯ ধারা অনুযায়ী, বিআরটিএ-এর এই ট্রাস্টি বোর্ড নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। সম্প্রতি, যশোর জেলায় এমন ১৪টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এই সুবিধা পেয়েছে।

বিআরটিএ যশোরের পরিদর্শক তারিক হাসান জানান, চলতি বছরের গত ৭ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৭২ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন। কীভাবে এই পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড় দুর্ঘটনা হলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।

এছাড়া সিভিল সার্জন অফিস, ফায়ার সার্ভিস অফিস ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকেও তারা নিহত ও আহতদের তথ্য সংগ্রহ করেন।

সরকারের এই আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম ২০২৩ সাল থেকে চালু হয়েছে। চলতি বছরে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আবেদনের প্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ১৪টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। এর মধ্যে ১১টি নিহত পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ৫৫ লাখ টাকা এবং আহত ৩ জনকে ১ লাখ টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে, ৫৮টি পরিবার একই রকম দুর্ঘটনার শিকার হয়েও সহাতার বাইরে থেকে গেছে। কারণ তারা এই সুবিধা সম্পর্কে জানে না।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, এই আর্থিক সহায়তা পেতে একটি নির্দিষ্ট ফরম (ফরম নং-৩২) পূরণ করে আবেদন করতে হয়। ফরমে উলি¬খিত শর্ত পূরণ করাও জরুরি যার মধ্যে রয়েছে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্ক, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, দুর্ঘটনার মামলা বা জিডির নম্বর, মৃত্যু সনদ বা আহত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র ইত্যাদি। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি বোর্ড কাজ করে, যেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সদস্যরা থাকেন।

যশোরের বিআরটিএ পরিদর্শক তারিক হাসান জানান, বিআরটিএ তাদের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার চালালেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অন্যদিকে, সম্প্রতি ক্ষতিপূরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, সরকারের এই সুবিধা অনেক অসহায় পরিবারকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেয়। তিনি আরও বলেন, এই বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো জরুরি।

এক্ষেত্রে, সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। দুর্ঘটনার পরপরই থানায় সাধারণ ডায়েরি বা মামলা করা হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দুর্ঘটনার শিকার পরিবারগুলো শোক ও আর্থিক সংকটের কারণে আইনি প্রক্রিয়া বা সরকারি সহায়তা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার সুযোগ পায় না।