ওষুধের মূল্য কমানোর ঘোষণায় বাড়লো ইনসুলিনের দাম

0

বি এম আসাদ ॥ সরকারিভাবে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) ৩৩ ধরনের ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্তের কোন প্রভাব বাজারে নেই। বরং বেড়ে গেছে বিদেশি ইনসুলিনের দাম। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা চরম হতাশায় পড়েছেন।

যশোরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইডিসিএল-এর যেসব ওষুধের দাম কমানো হয়েছে, সে বিষয়ে অধিকাংশ ফার্মেসি মালিকই অবগত নন। তারা শুধু শুনেছেন যে কিছু ওষুধের দাম কমেছে, তবে কোন কোন ওষুধ তা তারা জানেন না। অন্যদিকে, দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত ওষুধ পূর্বের দামে বিক্রি হলে বিদেশি ওষুধের দাম ব্যাপকহারে বেড়েছে। কিছু কিছু ওষুধের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া এসব ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ডায়াবেটিস রোগীদের ওপর। বিদেশি কোম্পানি ব্রাজিল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তৈরি ইনসুলিনের দাম গত ৫ আগস্টের পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

মিক্সটাড ৩০/৭ পেনফিল: আগে বক্সপ্রতি (৫টি) মূল্য ছিল ৪৬০ টাকা, এখন ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫১০ টাকায়। অ্যাকটাপিড ৩০/৭০ পেনফিল: এর দামও ৪৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫১০ টাকা। নভোমিক্স পেনফিল-সি: আগে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৭০ টাকা বেড়ে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নোভোরাপিড: এর দাম ৭৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৫০ টাকা।

যেসব রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে না, চিকিৎসকরা তাদের এই ধরনের ইনসুলিন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ রোগীরা চরম হতাশায় পড়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেকেই এখন অপেক্ষাকৃত কম দামের দেশীয় ইনসুলিন যেমন ম্যাকসুলিন ৩০/৭০-১০০ এমএল, ইনসুলিন ৩০/৭০-১০০এমএল, জেনসুলিন এম ৩০/৭০-১০০ এমএল এবং ডায়াসুলিন ৩০/৭০-১০০ এমএল ব্যবহার করছেন। এসব দেশীয় ইনসুলিনের দাম আগের মতোই ৪১৫ টাকা রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এসব ওষুধের দামও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস যশোর জেলা শাখার সভাপতি এম. জামাল উদ্দিন বিলু বলেন, দেশি ওষুধের দাম এখনও বাড়েনি, তবে বিদেশি ইনসুলিন পেনফিলের দাম বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজারে অনেক ওষুধেরই সরবরাহ কম। সামনে যেসব নতুন ওষুধ বাজারে আসবে, সেগুলোর দামও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

এরআগে ইডিসিএল অত্যাবশ্যকীয় ৩৩টি ওষুধের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করে। কোম্পানীটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এর ফলে সরকারের প্রায় ১১৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা জানান, অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ওরস্যালাইন ও ইনজেকশনসহ মোট ৩৩ ধরনের ওষুধের দাম কমানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করতে সিন্ডিকেট ভাঙা, দুর্নীতি দমন এবং প্রায় ৭০০ অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাঁটাইয়ের মতো বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন প্রায় ৫৯ কোটি টাকা বেড়েছে এবং কাঁচামাল কেনার দরপত্র উন্মুক্ত হওয়ায় প্রতি মাসে ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

ভবিষ্যতে ইডিসিএল-এর অধীনে নতুন দুটি প্ল্যান্ট যা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে একটি ভ্যাকসিন ও ইনসুলিনসহ অন্যান্য বায়োলজিক্যাল পণ্য উৎপাদনের জন্য বায়োটেক প্ল্যান্ট হবে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি চাহিদার ৭০ শতাংশ থেকে উৎপাদন ৯০ শতাংশে উন্নীত করারও পরিকল্পনা করছে।