ফাঁকা করোনা হাসপাতাল

0
॥ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ॥
করোনার দৈনিক শনাক্তের হার গত কয়েকদিন ধরে দেড় শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। মৃত্যুর সংখ্যাও এখন ১০-এর নিচে নেমে এসেছে। আর সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। নির্ধারিত এসব হাসপাতালে ৯১ শতাংশের উপরে সিট ফাঁকা থাকছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর যখন সংক্রমণ আস্তে আস্তে কমে আসছিল তখনই সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীর জন্য আংশিক সিট রেখে বাকি শয্যায় নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে করোনা রোগীর জন্য নিয়োজিত জনবলকে অন্যান্য রোগীদেরও সেবা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় অধিদপ্তর থেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনার রোগী আস্তে আস্তে কমে আসছে। ফলে এসব হাসপাতালে কোভিডের পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদেরও চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা আগেই দেয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, কোভিডদের জন্য আংশিক শয্যা রেখে বাকি সিটে নন-কোভিডদের চিকিৎসা দিতে। যে জনবল রয়েছে তারাই কোভিডের পাশাপাশি নন-কোভিডের চিকিৎসা দেবেন। তিনি আরও জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর যখন সংক্রমণ আস্তে আস্তে কমে আসছিল তখনই এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতালগুলোকে দেয়া হয়েছে। করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ১৩ হাজার ৮০৩টি। তাতে রোগী ভর্তি আছে ১ হাজার ৮৩ জন এবং শয্যা খালি আছে ১২ হাজার ৭২০টি। সারা দেশে আইসিইউ শয্যা ১ হাজার ২৪৭টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ২০৬টিতে এবং খালি আছে ১ হাজার ৪১টি। অর্থাৎ সাধারণ ও আইসিইউ মিলে রয়েছে মোট ১৫ হাজার ৫০ শয্যা। এর সঙ্গে এইচডিইউ সিট ৭২২টি যোগ করলে সবমিলে মোট শয্যা ১৫ হাজার ৭৭২টি। এইচডিইউ সিট ফাঁকা আছে ৬৩৩টি। তার মধ্যে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৩৭৮ জন রোগী। আর শয্যা ফাঁকা আছে ১৪ হাজার ৩৯৪টি। ৯১ দশমিক ২৬ শতাংশ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরীর করোনা ডেডিকেটেড সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৪ হাজার ৯২৮টি। তাতে ভর্তি আছেন ৫৪৭ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৩৮১টি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীতে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৭৯৮টি। তাতে ভর্তি আছেন ১০৬ জন এবং খালি আছে ৬৯২টি। রাজধানীতে করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালে সাধারণ সিট ৩ হাজার ৪৪২টির মধ্যে ২ হাজার ৯৭২টি খালি এবং আইসিইউ ৩৯৮টির মধ্যে ৩২৮টি ফাঁকা রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৯১৭টি। এই শয্যায় ভর্তি আছেন ৭২ জন এবং খালি আছে ৮৪৫টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৬৪টি। তাতে ভর্তি আছেন ২৪ জন এবং খালি আছে ৪০টি। বিভাগওয়ারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউ’র শয্যার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর ছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় সাধারণ শয্যা ১ হাজার ১২৪টি এবং আইসিইউ ৬০টি। ময়মনসিংহ বিভাগে সাধারণ শয্যা ৪৯৬ এবং আইসিইউ ২২টি, রাজশাহী ৫১৫টি সাধারণ শয্যা এবং আইসিইউ ৪৮টি, রংপুর ১ হাজার ৪১টি সাধারণ এবং ৪৪টি আইসিইউ, খুলনা ১ হাজার ৬৮৩টি সাধারণ এবং ৮৬টি আইসিইউ, বরিশালে ৬৫০টি সাধারণ এবং আইসিইউ ৪১টি, সিলেট বিভাগে সাধারণ শয্যা ৪৩৬টি এবং আইসিইউ ২২টি।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৭ হাজার ৮৪১ জনে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩০৬ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৩২ হাজার ৪৬৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দেশে ৮৩৩টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ৯১৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৯ হাজার ৯৫১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৭ জনের মধ্যে পুরুষ ৩ জন এবং নারী ৪ জন। তাদের নিয়ে দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৭ হাজার ৮২৭ জন এবং নারী ১০ হাজার ১৪ জন। তাদের মধ্যে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১ জন. ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২ জন,২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৭ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন রয়েছে। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৬ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১ জন মারা গেছেন।