চুয়াডাঙ্গায় কুরবানির পশুর দাম বেশি

0

রিফাত রহমান,চুয়াডাঙ্গা॥ কুরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র একদিন। ক্রেতা বিক্রেতার পদচারণায় চুয়াডাঙ্গা জেলার পশুহাটগুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রত্যেকটি হাটে যথেষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগম দেখা যাচ্ছে। বিক্রির জন্যে কুরবানির পশু আনা হলেও সেগুলো সব বিক্রি হচ্ছেনা। অতিরিক্ত দাম চাওয়ার কারণে আর্থিক সঙ্কটে থাকা ক্রেতারা পশু কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। তাছাড়া অসহ্য তাপমাত্রা ও ভ্যাপসা গরমে হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকছে অনেক ক্রেতা। তারা ছোট ছোট গ্রাম্য খামারির কাছ থেকে তাদের পছন্দের পশু কিনতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। শহরের পথে পথে বিক্রি হচ্ছে খাসি ছাগল। সেখান থেকে দরদাম করে অনেকে খাসি ছাগল কিনছেন।
চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পশুহাট দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগী, জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারী, আলমডাঙ্গা উপজেলার পৌর পশুহাট (এটি ঢাকার গাবতলী পশুহাটের পরের স্থানে) ও সদর উপজেলার ভুলটিয়া পশুহাটে বিক্রির জন্যে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া পালনকারীরা সেগুলো নিয়ে এলেও অতিরিক্ত দাম চাওয়ায় অনেক পশু বিক্রি হচ্ছেনা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে গরু মোটাতাজাকরণ করা খামারিরা। এবার মোটা গরুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারা। সে কারণে এবার অধিক লোকসানের মুখোমুখি হতে হবে ওইসব খামারিদের। এছাড়া পশু বিক্রেতারা খেয়ালখুশি মত তাদের পালিত পশুর দাম ক্রেতারা বলছেন,তাদের বাজেট ছাড়া ১০-২০ হাজার টাকা বোশ দিয়ে গরু কিনতে হচ্ছে। এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, গরু লালনপালন করার খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেশি চাওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রহিম মিয়া বলেন,বিভিন্ন গ্রাম থেকে তিনি ৮টি গরু কিনেছেন। ৫টি গরু ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়েছে। সীমিত লাভে বাকি গরুগুলো বিক্রি করে দেবেন।
গরু ব্যবসায়ী আলী ব্যাপারী বলেন, ৫টি গরু নিয়ে সকাল থেকে তিনি শিয়ালমারী হাটে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সুবিধামত দাম না পাওয়ার কারণে একটি গরুও তিনি বিক্রি করতে পারেন নি। বড় ব্যাপারীরা গরু কিনে নিয়ে আগেই ঢাকায় চলে গেছেন যার কারণে হাটে ক্রেতা কিছুটা কম।
পাইকারি ক্রেতা ইউনুস ব্যাপারী বলেন,দুইটি ট্রাকে আনুমানিক ২০টি গরু কিনে ঢাকাতে নিয়ে যাবো। ১২টি গরু কিনতে পেরেছি। আর ৮টি গরু কেনার চেষ্টা করছি।
চুয়াডাঙ্গা শহরের মুসলিমপাড়ার বন্ধন সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সদস্য সাইফুল ইসলাম কনক জানান, এ প্রতিষ্ঠানে তারা ৪০টি গরু পালন করেছেন। এ পর্যন্ত ১৫টি গরু বিক্রি করা গেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভুলটিয়ায় শনিবার (১৫ জুন) সর্বশেষ হাট। ওই হাটে গরুগুলো বিক্রি না করতে পারলে তাদের ১০ লাখ টাকা লোকসান হবে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা গ্রামের চৌধুরী এগ্রো খামারের স্বত্বাধিকারী রাকিব চৌধুরী বলেন, তাদের খামারে ২৫০টি গরু কুরবানির জন্যে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ১০০টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি ১৫০টি গরু বিক্রির অপেক্ষায় আছে। এ গরুগুলো বিক্রি না হলে মোটা অংকের লোকসান হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান,চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজার ৯১৭ টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৭৬ টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৫৯৯ টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১ হাজার ৯২৮ টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৭১৪ টি। এসব খামারে কুরবানি উপলক্ষে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৭৯ টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৫৪ হাজার ৮৯১টি, মহিষ ১৬০টি, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬টি, ভেড়া ৩ হাজার ৯২৫টি এবং অন্যান্য ৭টি। এবার জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬ টি। সে হিসেবে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৫৩ হাজার ২৩টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।