হাটে দাম বেশি হওয়ায় ছোট গরুর দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে যশোরের অধিকাংশ হাটে তোলা হচ্ছে কুরবানির পশু। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে হাটে তেমন বেচাকেনা জমছে না। প্রচন্ড গরম ও পরিবহনের বাড়তি খরচ, পশুর দাম বেশি হওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতারা অপেক্ষাকৃত ছোট সাইজের গরুর খোঁজে গ্রামে ছুঁটছেন। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন আগামী হাটগুলোতে পশুর হাটে বেচাকেনা বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরে সর্ববৃহৎ যে কয়টি পশুর হাট রয়েছে তার মধ্যে শার্শা উপজেলার সাতমাইল, বাঘারপাড়া উপজেলার চাড়াভিটা, চৌগছা উপজেলা হাট ও কেশবপুর উপজেলা হাট উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে শার্শার সাতমাইল হাটে গত শনি ও মঙ্গলবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গরু উঠলেও বেচাকেনা তেমন একটা হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। দুটি হাটে পর্যাপ্ত পশু ও ক্রেতার উপস্থিতি হলেও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বাইরের জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা না আসায় খামারিরা প্রত্যাশা অনুযায়ী গরু বিক্রি করতে পারেনি।
একই পরিস্থিতি ছিলো বাঘারপাড়ার ভাঙ্গুড়া ও চাড়াভিটা পশুর হাটে। সোমবার ভাঙ্গুড়া হাটে প্রচুর গরু উঠলেও পশু বিক্রি তেমন একটা হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। ভাঙ্গুড়া গ্রামের গরুর খামারি টিপু সুলতান বলেন, সপ্তাহে শুধুমাত্র সোমবার ভাঙ্গুড়া হাটে পশু বিক্রি হয়। এদিন প্রচুর সংখ্যক গরু উঠলেও বেচাকেনা তেমন একটা হয়নি। তিনি বলেন, হাটে ছোট সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। যেগুলো গরু বিক্রি হয়েছে তার অধিকাংশই ছিলো ছোট গরু।
একই কথা বলেন, করিমপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন নামে এক ক্রেতা। তিনি বলেন, যারা পশু হৃষ্টপুষ্ট করে বড় করেছে তারা বড় বিপদে আছে। বাজারে মাঝারি সাইজের গরু দেড় লাখ টাকার নিচে নেই। আর একটু বড় সাইজ হলে দুই লাখের ওপরে দাম হাঁকাচ্ছে বিক্রেতা। এ অবস্থায় গ্রামে চাষি পর্যায়ে পালিত ছোট গরু খুঁজতে গ্রামে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
বুধবার ছিলো বাঘারপাড়ার চাড়াভিটা হাট। এ হাটেও প্রচুর সংখ্যক গরু উঠলেও দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিলো ক্রেতাদের মধ্যে। ক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, পশুর হাটে যেহারে গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে তাতে অনেকেরই কুরবানি দেওয়া দায় হয়ে পড়ছে। গত কুরবানি মৌসুমে যে গরু ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে, সেই গরু এখন বিক্রি হচ্ছে এক লাখেরও ওপরে। এ অবস্থায় অধিকাংশ ক্রেতারা ছোট সাইজের গরু কিনছেন। তিনি বলেন, আমি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছি। হিসেব করে দেখেছি সব শেষে প্রতি কেজি মাংস প্রায় ৯শ টাকা পড়বে।
তবে খামারি ও ব্যবসায়ীদের দাবি, এবছর পশু খাবার, যানবাহন, শ্রম খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় পশুর দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় বেশি দামে গরু বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
আজিজুর রহমান নামে এক খামারি বলেন, আমার খামারে ২৫টি গরুর মধ্যে ২০টি গরু বিক্রি উপযুক্ত। ৭টি গরু খামার থেকে বিক্রি করেছি। আজ হাটে ৫টি গরু এনে বিপদে আছি। প্রতিটি গরু দুই লাখের ওপর দাম। কিন্তু ক্রেতাদের ছোট সাইজের গরুর প্রতি বেশি চাহিদা। গত বছরের মতো এ বছরও গরু অবিক্রীত থাকবে কিনা সে সংশয়ে আছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক বলেন, এ বছর যশোরে কোনো পশুর সংকট নেই। চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত আছে ৩০ হাজার ১৩৩টি পশু। চাইলে অন্য জেলায়ও কুরবানির পশু পাঠানো যাবে। তিনি আরও বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় মোট ২১টি পশুর হাট বসে। এসব হাটের জন্য রয়েছে ১০টি মেডিকেল টিম। ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।