চৌগাছায় কাঁঠালের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায়

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছা উপজেলায় এ বছর কাঁঠালের ফলন নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে। বৈশাখ মাসে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কাঁঠাল পরিপূর্ণতা পায়নি, বেশির ভাগ গাছে কাঁঠাল এখনও রয়েছে ছোট। তাই ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় চাষিরা।
চৌগাছার মাটি সব ধরনের চাষে উপযোগী। বর্তমানে উপজেলায় অন্যান্য ফলের পাশাপাশি কাঁঠালের বাণিজ্যিক চাষ করছেন কৃষকরা। গত কয়েক বছর ধরে কাঁঠালের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বাজার দর ভাল পাওয়ায় কৃষক বেশ লাভবান হয়েছেন। তবে চলতি বছরে সেই ধরনের সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছেন কাঁঠাল চাষিরা।
বৃহস্পতিবার উপজেলার কংশারীপুর, তরিনিবাস, কদমতলা, মাশিলাসহ বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কাঁঠাল গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁঠাল ধরেছে, কিন্তু এখনও অধিকাংশ গাছের কাঁঠাল রয়েছে তুলনামূলক ছোট। সম্প্রতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কাঁঠাল বেড়ে উঠতে পারেনি বলে জানান চাষিরা।
কথা হয় কদমতলা গ্রামের রিপন হোসেন, তোতা মিয়া, তারিনিবাস গ্রামের হাফিজুর রহমান, ফজলুর রহমানের সাথে। তারা বলেন, কাঁঠাল গ্রামবাংলা তো বটেই শহরের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। মৌসুম এলে রসালো এই ফলের স্বাদ নিতে কেউ ভুল করে না। এক দশক আগেও গ্রামের পতিত জমি বা বাড়ির আশপাশে যেনতেন ভাবে কাঁঠাল গাছ বেড়ে উঠেছে। সেই সব গাছে যে কাঁঠাল ধরেছে তা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করা হতো। সময়ের সাথে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। এখন বাজারে কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক আর দামও সন্তোজনক। সে কারণে অনেকেই এখন বাণিজ্যিক ভাবে কাঁঠাল চাষ করছেন।
গৃহবধূ মর্জিনা খাতুন, সাথি খাতুন বলেন, জ্যৈষ্ঠ মাস এলেই গ্রামের বাড়িতে কাঁঠাল না থাকলে বেজায় বেমানান দেখা যায়। কাঁঠালের স্বাদ আর সুগন্ধ সকলকে বিমোহিত করে। একটি কাঁঠাল হতে অনেক কিছুই মেলে, সে কারণে কাঁঠালের যেন জুড়ি নেই। বিশেষ করে কাঁঠালের স্বাস (কুয়া) আমরা খাই, বিচি দিয়ে হয় হরেক রকমের তরকারি রান্না। দেশি মুরগি আর কাঁঠালের বিচি রান্নার স্বাদ যে একবার নিয়েছে সে তো বারবার খেতে চাই। কাঁঠালের বিচি ভাজি খেতেও বেশ সুস্বাদু। এ ছাড়া কাঁঠালের বাকল বাড়িতে পোষা প্রাণীরা খাই, সব মিলিয়ে একটি কাঁঠালের কোনো কিছুই পড়ে থাকে না, সবই কাজের বলে তারা মনে করেন।
মৌসুমী কাঁঠাল ব্যবসায়ী আড়পাড়া গ্রামের হজরত আলী, জামাল হোসেন, বাবলুর রহমান বলেন, এ বছর কাঁঠালের সংকট দেখা দিতে পারে। অন্য বছরের এই সময়ে আমরা গ্রাম হতে কাঁঠাল কিনে তা বাজারে বিক্রি শুরু করেছি। গাছে কাঁঠাল আছে প্রচুর পরিমাণে কিন্তু সাইজে ছোট সে কারণে গাছ মালিকরা কাঁঠাল বিক্রি করতে চাইছে না। ব্যবসায়ীরা জানান, চৌগাছায় উৎপাদিত কাঁঠাল রাজধানী ঢাকাসহ খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাটি, মোংলা, বাগেরহাট জেলাতে যায়। মৌসুম শুরু হলে দলে দলে ব্যাপারীরা চৌগাছা হাটে আসেন এবং ট্রাক লোড নিয়ে কাঁঠাল নিয়ে যান স্বস্ব জেলাতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, প্রচ- তাপ কাঁঠালের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করেছে ঠিকই। কিন্তু ওই সময়ে আমরা চাষিদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছি। আশা করছি কৃষক শেষমেষ লাভবান হবেন।