লোহগড়ায় তালের রসে জীবিকা নির্বাহ

0

শিমুল হাসান, লোহাগড়া (নড়াইল)॥ প্রচন্ড গরমের মধ্যে তালের রস নড়াইলের লোহাগড়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তালের রস সংগ্রহে সতর্কতা অবলম্বন না করলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। তালের রস সংগ্রহ ও পানে অজ্ঞতা রয়েছে মানুষের মাঝে ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তালের রস গ্রীষ্মকালে আহরণ করা হয়। এতে ভিটামিন এবিসি এবং জিংক, ক্যালসিয়াম. পটাশিয়াম ও আয়রন জাতীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গ্রীষ্মকালে এটি গ্রামবাংলার একটি সুপরিচিত খাবার।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলা- উপজেলায় অনেক তাল গাছ রয়েছে। সেগুলো থেকে উৎপন্ন হয় তাল ও রস। তালের রস থেকে তালগুড়ও তৈরি হয়। তালগাছ বাণিজ্যিকভাবে সাধারণত কেউ রোপণ কওে না । এ গাছ বড় হয়ে ফল ধরতে এবং রস উৎপন্ন হতে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ বছর সময়ের প্রয়োজন।
গ্রীষ্মকালের শুরুতেই রস সংগ্রহের জন্যে তালগাছ প্রস্তুত করা হয়। যেসব গাছে তাল ধওে না সে গাছগুলোতে হয় লম্বা লম্বা জট। সে গাছগুলোকে বলা হয় জটা তালগাছ। তাল গাছকে মানুষ সাধারণত দুই ধরনের নামে ডাকে। পুরুষ তালগাছ( যে গাছে জট হয়) ও স্ত্রী তালগাছ (যে গাছে তাল হয়)। উভয় গাছ থেকেই রস সংগ্রহ করা যায়। তালগাছ প্রায় ৪৫ থেকে ৬৫ ফুট লম্বা হয় (বয়স ভেদে)। বৈশাখ মাসের শুরুতে গাছ পরিষ্কার করা হয়। তালগাছ দীর্ঘদেহী ও লম্বা হওয়ায় তাতে ওঠার জন্যে বাঁশ ব্যবহার করা হয়। জটাগাছের জটের একদম নিচেরদিকে একটি অংশ কাটা হয় যেন সেখান থেকে রস বের হতে পারে। আবার যেসব গাছে তালের মোচা বের হয় সেই গাছগুলোর মোচার একদম নিচের অংশ কাটা হয়। তালগাছ কাটতে পাতলা ছোট ধরনের ধারালো ছুরি ব্যবহার করা হয়। একটি গাছে ৮ থেকে ১০টি ভাড়( মাটির পাত্র)রাখা হয়। রস পরিষ্কার করবার জন্যে পাত্রগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় চুন। কতগুলো জট একসাথে পাত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আবার মোচাওয়ালা গাছে একটি পাত্রে একটি মোচাই ঢোকানো যায়। পাত্র রাখার সময় প্রতিবারই জট বা মোচার অগ্রভাগ ধারালো ছুরি দিয়ে সামান্য কেটে দিতে হয়।

লোহাগড়া পৌরসভার রাজুপুর গ্রামের গাছি মিরাজ খালাসী জানান, প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় তাল গাছ কাটা হয়। সকালের ও দুপুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করি এবং বিকেলের রস বাজারে নিয়ে গ্লাসে করে বিক্রি করি। প্রতি গ্লাস রস ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রচন্ড গরমে মানুষ স্বস্তি পেতে বেশ রস পান করছে। কাঁচা রসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বাজারে। তিনি আরো জানান, গাছ থেকে রস পাড়ার পর ওই রস ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হয় যাতে চুন ও ময়লা মিশে না থাকে। প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকার রস বিক্রি করছি বাজারে গিয়ে। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সন্ধ্যার আগে কাঁচা তাল রস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকেই।
তাল রস জনপ্রিয় হলেও কাঁচা তাল রস পানে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। রস সংগ্রহে সাবধনতা অবলম্বন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে তাল রস পানে যে কেউ অসুস্থ হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ।
লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মাসুদ তাল রস পান সম্পর্কে বলেন, পুরানো তাল রস খেয়ে যে কেউ অসুস্থ হতে পারেন। নতুন ও পুরনো রস একসাথে করা হচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। রস সংগ্রহের পাত্র, রস পরিষ্কার করবার ছাঁকনি ও রস খাওয়ার গ্লাস পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কিনা সেটা অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাল রসেও নিপা ভাইরাসের আক্রমন হতে পারে। রাতের বেলা বাদুর রসের পাত্রে বসলে বা রস খেলে রসে নিপা ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। তাল রসের পাত্রে যে চুন দেওয়া হয় সেটা পেটে গেলে স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। প্রচন্ড গরম থেকে বাঁচতে ঘনঘন বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি, ডাবের পানি পান করা যেতে পারে।