আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল খুশির ঈদ

0

 

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ

‘সকল ধরা মাঝে বিরাট মানবতা মুরতি লভিয়াছে হর্ষে,/আজিকে প্রাণে প্রাণে যে ভার জাগিয়াছে, রাখিতে হবে সারা বর্ষে/ এ ঈদ হোক আজ সফল ধন্য, নিখিল মানবের মিলনের জন্য;/ শুভ যা জেগে থাক, অশুভ ঘুচে যাক, খোদার শুভাশীষ পর্শে’Ñএই শিক্ষা নিয়ে বছর ঘুরে ফিরে এসেছে ঈদুল ফিতর আবার দুয়ারে। ঈদ মোবারক।
আজ ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যদি শাওয়ালের একফালি সরু চাঁদ দেখা যায় পশ্চিমের আকাশে তাহলে আগামীকাল ১০ এপ্রিল বুধবার, নতুবা ৩০টি রোজা পূর্ণ হয়ে ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সারা দেশে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর দেশের মুসলমানরা বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদের জামাতের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সারাদেশে ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রাখবে। সাদা পোশাকে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তৎপর থাকবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। ইতোমধ্যে সেখানে ঈদের জামাতের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আজ থেকে সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে।
বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো ঈদের দিন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জাতীয় আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, নিউজ পোর্টালগুলো বিশেষ ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয় কর্মসূচি ও নিজ নিজ কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে যথাযথ মর্যাদায় সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
ঈদ উপলক্ষ্যে মুসলমানদের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীসহ সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে হিজরি ১৪৪৫ সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি।
বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা টেলিফোন নম্বর : ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭, ফ্যাক্স নম্বর : ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১ অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর জন্যে বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয়। তবে কোনও অবস্থাতে রমজান মাস ৩০ দিনের বেশি দীর্ঘ হবে না। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তিতে শাওয়ালের প্রারম্ভ গণনা করা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় লাইলাতুল জায়জা (অর্থ: পুরস্কার রজনী) এবং চলতি ভাষায় চাঁদ রাত বলা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ অর্থাৎ সূর্যাস্তে একফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ হয়, এই কথা থেকেই চাঁদরাত কথাটির উদ্ভব। ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা দেয়া ইসলামী বিধান।
অপরদিকে ২ রাকাত ঈদের নামাজ ৬ তাকবির সহকারে ময়দান বা বড় মসজিদে পড়া হয়। ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর ঈদুল ফিতরের নামাজের ওয়াক্ত হয়। এই নামায আদায় করা ওয়াজিব। ইমাম কর্তৃক জুমার নামাজের পূর্বে খুৎবা প্রদানের বিধান থাকলেও ঈদের নামাজের খুৎবা নামাজের পরে প্রদান করা বিধেয়। ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে খুৎবা প্রদান ইমামের জন্যে সুন্নত ; তা শ্রবণ করা মুসল্লির জন্যে ওয়াজিব। সাধারণত ঈদের নামাজের পরে সমবেতভাবে মুনাজাত করা হয় এবং মুসলমানরা একে অন্যের সাথে মুসাফাহা ও কোলাকুলি পূর্Ÿক সম্ভাষণ বিনিময় করে থাকেন। ঈদের বিশেষ শুভেচ্ছাসূচক সম্ভাষণটি হলো, ঈদ মোবারক।
ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওয়ার আগে একটি খেজুর কিংবা খোরমা অথবা মিষ্টান্ন খেয়ে রওনা হওয়া সওয়াবের কাজ। ঈদুল ফিতরের সুন্নতের মধ্যে রয়েছে গোসল করা, মিসওয়াক করা, আতর-সুরমা লাগানো, এক রাস্তা দিয়ে ঈদের মাঠে গমন এবং নামাজ-শেষে ভিন্ন পথে গৃহে প্রত্যাবর্তন। সর্বাগ্রে অযু-গোসলের মাধ্যমে পাক-পবিত্র হতে হবে।
বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশে ঈদুল ফিতরই হলো বৃহত্তম বার্ষিক উৎসব।
বাংলাদেশে ঈদ উপলক্ষ্যে সারা রমজান মাস ধরে সন্ধ্যাবেলা কেনাকাটা চলে। অধিকাংশ পরিবারে ঈদের সময়েই নতুন পোষাক কেনা হয়। ঈদের দিন ঘরে ঘরে সাধ্যমত বিশেষ আহারাদির আয়োজন করা হয়। ঈদের দিনে সেমাই বা অন্যান্য মিষ্টি নাস্তা তৈরি করার চল রয়েছে। রাজধানী থেকে ঈদের ছুটিতে প্রচুর লোক নাড়ির টানে নিজেদের বসত ভিটেয় ফিরে আসেন। এ কারণে ঈদের সময়ে রেল, সড়ক ও নৌপথে প্রচন্ড ভিড় দেখা যায়।
ঈদের চাঁদ দেখার সময়কার আনন্দমুখর পরিবেশকে নিয়ে লেখা ও সুর করা কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ ঈদের দিন ধ্বনিত হবে সবখানে।