সুসংবাদের বার্তাবহ আলবিদা রমজান

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ ২৪ রমজান। আর মাত্র ৫ বা ৬দিন বাদেই ঈদুল ফিতর। ঈদ উৎসবে অংশ নিতে সমগ্র জাতি এখন উন্মুখ। বাকি কটি সিয়াম পালনে সর্বাত্মকভাবে প্রত্যেকে সামিল। সিয়াম একটি ফরজ ইবাদত। এ থেকে কারও বঞ্চিত থাকা উচিত নয়। আজকের কলামে আমরা একটু ব্যতিক্রমী বিষয়ে দৃকপাত করব। আর সেটি হচ্ছে, গত হয়ে যাওয়া অভিভাবকের সম্পর্কে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, যে মারা গেল, অথচ তার সিয়াম রয়েছে, তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে সওম রাখবে। ইব্বুখারি ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, জনৈক নারী নবী সা. এর নিকট এসে বলল, হে রাসূল, আমার মা মারা গেছে, তার ওপর মান্নতের সওম রয়েছে, আমি কি তার পক্ষ থেকে সওম রাখব? তিনি বললেন, তুমি কি মনে কর, তোমার মার ওপর যদি ঋণ থাকে, আর তুমি তা আদায় কর, তাহলে কি যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তোমার মায়ের পক্ষ থেকে তুমি সওম রাখ। বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলের সা. এর নিকট বসেছিলাম, ইত্যবসরে তার নিকট এক নারী এসে বলল, আমি আমার মাকে এক ‘দাসী’ সদকা করেছি, কিন্তু তিনি মারা গেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, তোমার সওয়াব হয়ে গেছে, তুমি তা মিরাস হিসেবে ফিরিয়ে নাও। সে বলল, হে রাসূল, তার জিম্মায় একমাসের সওম ছিল, আমি কি তার পক্ষ থেকে সওম রাখব? তিনি বললেন, তার পক্ষ থেকে সওম রাখ। তিনি বললেন, তিনি শিক্ষা ও মাসায়েল: এক. শারীরিক ইবাদতে প্রতিনিধিত্ব হয় না এটাই মূলনীতি, তবে সিয়াম এ নীতির অন্তর্ভুক্ত নয়, যেমন নয় হজ। হাফেজ ইবন আব্দুল বার রহ. বলেছেন,সালাতের ব্যাপারে সবাই একমত যে, কেউ কারও পক্ষ থেকে সালাত আদায় করবে না, না ফরজ, না সুন্নত, না নফল, না জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে, না মৃত ব্যক্তির। অনুরূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সিয়াম, জীবিত অবস্থায় একের সওম অপরের পক্ষ থেকে আদায় হবে না। এতে ইজমা রয়েছে, কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু যে মারা যায়, তার জিম্মায় যদি সিয়াম থাকে, তার ব্যাপারে পূর্বাপর আলেমদের ইখতিলাফ রয়েছে। দুই. মৃত ব্যক্তির জিম্মায় যদি সিয়াম থাকে, তার দুই অবস্থা, (১). কাজার সুযোগ না পেয়ে মারা যাওয়া, সময়ের সংকীর্ণতা, অথবা অসুস্থতা, অথবা সফর, অথবা সওমের অক্ষমতার দরুণ কাজার সুযোগ পায়নি, অধিকাংশ আলেমদের মতে তার ওপর কিছু নেই। (২) কাজার সুযোগ পেয়ে মারা যাওয়া, এ ক্ষেত্রে সুন্নাত হচ্ছে তার তিন. মৃত ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করা বৈধ, আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কারও পক্ষ থেকে। হাদিসে বর্ণিত, সওয়ামা আনহু ওয়া আদ্দাহু অর্থ হচ্ছে ওয়ারিশ ও উত্তরসূরি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন হয়, অন্যথায় তার পক্ষ থেকে তার নিকট আত্মীয়, অথবা দূরের কারও সিয়াম পালন করা বৈধ, ঋণ আদায়ের মতো। শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেছেন, নবী সা. তা ঋণের সাথে তুলনা করেছেন, ঋণ যে কেউ কাজা করতে পারে, অতএব প্রমাণিত হয় যে, এটা যে কারও পক্ষ থেকে করা বৈধ, শুধু সন্তানের সাথে খাস নয়। চার. মৃত্যু ব্যক্তির মানত কাজা করা ওয়াজিব নয়, যেমন নয় অভিভাবকদের ওপর তার ঋণ পরিশোধ করা, তবে এটা মৃত ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করার জন্য তাদের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ। পাঁচ. মৃতের জিম্মায় যদি অনেক সিয়াম থাকে, সে সংখ্যানুসারে তার পক্ষ থেকে কতক লোক যদি একদিন সিয়াম পালন করে, তাহলে শুদ্ধ হবে, তবে যে সওমে ধারাবাহিকতা জরুরি তা ব্যতীত, যেমন যিহার ও হত্যার কাফফারা, এ ক্ষেত্রে একজন ধারাবাহিকভাবে সিয়াম পালন করবে। ছয়. যদি তার পক্ষ থেকে কেউ সিয়াম পালন না করে, তবে তার অভিভাবকগণ তার পক্ষ থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দিবে, তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে দেওয়া বৈধ। সাত. ওয়ারিশগণ যদি কাউকে সওমের জন্য ভাড়া করে, তাহলে শুদ্ধ হবে না, কারণ নেকির বিষয়ে ভাড়া করা বৈধ নয়। আট. যদি মানত করে মুহাররাম মাসে সিয়াম পালন করবে, অতঃপর তিনি জিলহজ মাসে মারা যান, তার পক্ষ থেকে কাজা করা হবে না, কারণ সে ওয়াজিব হওয়ার সময় পায়নি, যেমন কেউ মারা গেল রমজানের পূর্বে। নয়. যার ওপর রমজানের কতক দিনের সিয়াম ওয়াজিব, সে যদি তার নিকট আত্মীয়ের কাজা অথবা কাফফারা অথবা মান্নতের সওম পালন করতে চায়, তার ওপর ওয়াজিব আগে নিজের সওম পালন করা, অতঃপর তার নিকট আত্মীয়ের সওম পালন করা। দশ. বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী কাজা সওমে ধারাবাহিকতা শর্ত নয়। এগারো. কাফফারার দু মাস সিয়ামের ধারাবাহিকতা ঈদের দিনের কারণে ভঙ্গ হবে না।