হারিয়ে যাচ্ছে গৌরবময় অতীত দর্শকের চাহিদা মেটাতে পারছে না যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়াম

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামের পাশের বাসিন্দা সৈয়দ মাশুক মোহাম্মদ সাথী। স্টেডিয়াম জড়িয়ে রয়েছে তার জাতীয় ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্প। আশি/নব্বই দশকের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, মই কিংবা দড়ি বেয়ে প্রাচীর টপকে দর্শকরা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতেন। জায়গা না পেয়ে অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাশের এম এম কলেজের শহীদ আসাদ হল, প্রিপারেটরি স্কুলের ছাদে কিংবা পানির ট্যাংকে বসে খেলা উপভোগ করতেন। সেই সময়ে দর্শকদের উপস্থিতি এতটাই বেশি ছিল যে, স্টেডিয়ামের কোন জায়গায় তিল ধারণের মত ঠাই থাকতো না।
তার কথায় প্রতীয়মান হয় সেই সময়ে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়াম কতটা প্রাণবন্ত ছিল। সৈয়দ মাশুক মো. সাথীর কথার সাথে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামের বর্তমান অবস্থার কোন মিল নেই। মাঠে খেলা থাকলেও, গ্যালারিতে দর্শক থাকেন। বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকে শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। দর্শক খরার মধ্য দিয়েই চলে স্টেডিয়ামের খেলাধুলা। নেই দর্শকদের উপভোগের ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের লড়াই। অথচ এই স্টেডিয়ামে এক সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক ক্রিকেটার ও ফুটবলার দর্শকদের মাতিয়ে গেছেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ বনাম শ্রী লংকার মধ্যে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এর দুই বছর পর চারটি আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্টিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা, নেপাল বনাম মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ বনাম কম্বোডিয়া এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক দল বনাম বাইরাইন যুবদল অংশ নেয়।
সৈয়দ মাশুক মোহাম্মদ সাথী বলেন, যশোরে লীগ পর্বের খেলায় ঢাকা , চট্রগ্রামের পরে যশোরে অবস্থান ছিল। খেলায় জাতীয় দলের সাবেক তারকা কাজী সালাউদ্দিন, বাদল রায়, কাউসার হামিদ, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, আরিফ খান জয়, আলফাজ আহমেদ, এমিলি, কোহিনুর, ওয়াসিম, নকিবদের মতো ফুটবলাররা বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়াম মাতিয়ে গেছেন।
ক্রিকেটেও কোন দিক থেকে পিছিয়ে ছিল না যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়াম। ২০০৯ সালে এই মাঠে বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা দলের মধ্যে চারদিনের টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। সেই ম্যাচের কো-অর্ডিনেটর ও পিচ কিউরেটর দায়িত্ব পালন করা সোহেল মাসুদ হাসান টিটো জানান, সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার আতাহার আলী খান, আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাহমুদ সুজন, মুশফিকুর রহিম, ইলিয়াস সানির মত টাইগার ক্রিকেটারদের পদচিন্ন রয়েছে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে। লংকান ক্রিকেটার রমেশ কালুবিতরাণা, ফার্নান্দোজ, কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টিন ডি ককের তম বিশ্বের তারকা সমৃদ্ধ ক্রিকেটাররা দর্শকদের মাতিয়ে গেছেন। ১৯৯৯ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খুলনা বিভাগীয় ভেন্যু হিসেবে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়াম ব্যবহৃত হয়েছিল।
যশোরের দুই ভাই দেশের ক্রিকেট ও ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে দীর্ঘ দিন যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন। এক ভাই যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি ও ছোট ভাই কাজী এনাম আহমেদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোরের একাধিক ক্রীড়া সংগঠক জানিয়েছেন নিজ জেলার ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের উন্নয়নে তাদের বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই।
ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, আশি কিংবা নব্বই দশকের মত ক্রিকেট ও ফুটবলের লিগ হয় না। যেকারণে মাঠের লড়াইটা জমে ওঠে না। এটিই হচ্ছে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামের দর্শকখরার অন্যতম কারণ।
সাবেক ফুটবলার বর্তমান ফুটবল প্রশিক্ষক হযরত আলী বলেন, ক্রীড়ার মাধ্যমে বেড়ে উঠেছি। বাকী জীবনটা ক্রীড়াঙ্গনে ব্যয় করতে চাই। যশোর শাসম-উল-হুদা স্টেডিয়ামের অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট হয়। আমি মনে প্রাণে চাই প্রিয় স্টেডিয়াম তার প্রাণ ফিরে পাক। দর্শকরা আবার মাঠে আসুক প্রাণ ভরে খেলা উপভোগ করুক। তার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব কবির বলেন, ভালো মানের খেলা হলেও দর্শকরা আসে না। আমাদের এখানে না, অন্যান্য স্টেডিয়ামেও একই অবস্থা। এর অন্যতম কারণ মোবাইল। ছেলে মোবাইল দেখে সময় কাটাবে, কিন্ত খেলার মাঠে এসে সময় কাটাবে না। তবে গ্রামগঞ্জে খেলা হলে দর্শক হয়।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্যে বৃহস্পতিবার কাজী নাবিল আহমেদ এমপির ব্যবহৃত ০১৭১১৪০৪৪৭৩ মোবাইলে ফোন দেয়া হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।