যশোরে বিএনপির কালোপতাকা মিছিলে পুলিশের সহিংস আচরণ, বাঘারপাড়ায় গুলি

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কালোপতাকা মিছিলে সহিংস আচরণ করেছে পুলিশ। বাঘারপাড়ায় পুলিশের গুলির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের এমন আচরণের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষও। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কালোপতাকা মিছিল করেছে বিএনপি।
যশোরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশ দলীয় নেতা-কর্মীদের ব্যাপক মারপিট করেছে। দলীয় কর্মী ভেবে সাধারণ মানুষও পুলিশের মারপিটের শিকার হয়েছে। এ সময় দলের ২৫ থেকে ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া দলের আট জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। যশোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, জুয়েল ইমরানের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য জেলা বিএনপির কার্যালয়ের আশেপাশে সড়কে অবস্থান নেন। এছাড়া কোতয়ালি থানা পুলিশেল ইন্সপেক্টর পলাশ বিশ্বাস, এ কে সফিকুল আলম চৌধুরী, এস আই আনসারুল হক, সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ রাকিবুজ্জামানসহ বিপুল সংখ্যক ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় শহর জুড়ে পুলিশের বেশ তৎপরতা দেখা যায়। বিশেষ করে লাল দিঘিরপাড়ের জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সকল প্রবেশ পথ ব্যারিকেড দেয় তারা। ফলে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লালদিঘির পাড়ের সকল রাস্তায় পথচারীদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের এমন কর্মকান্ডে শহর জুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ বলেন, ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত অবৈধ সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবিতে দেশব্যাপী পৌর ও থানা পর্যায়ে  মঙ্গলবার কেন্দ্র ঘোষিত পূর্ব নির্ধারিত কালোপতাকা মিছিলের কর্মসূচি ছিল। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালনের জন্যে দলীয় নেতা-কর্মীরা লাল দিঘিপাড়ের জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সেখান থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর আচমকা লাঠিচার্জ করে। সেখান থেকে দলের আটজন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে। আটক নেতাকর্মীরা হলেন- জেলা যুবদল নেতা নাসির উদ্দিন লিটু, বিএনপি নেতা ও হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি, ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আব্দুল জলিল, চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন, কচুয়া ইউনিয়ন যুবদল নেতা নাহিদ হাসান, সরকারি এম এম কলেজ ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম ও আশিকুর রহমান। পরে নগর ও সদর উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মোড় থেকে জেল রোড পর্যন্ত কালোপতাকা হাতে নিয়ে মিছিল করেন।
এদিকে মাইকপট্টি এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রতিটি মার্কেটে দোকানে দোকানে পুলিশ বিএনপি কর্মীদের অবস্থান জানতে তল্লাশি করে। দোকানের সামনে দাঁড়ানো কর্মচারীদের বিএনপি কর্মী ভেবে আচমকা তাদের অনেককে মারপিট করে। আবার দোকানের সামনে মোটরসাইকেল রেখে কেনাকাটা করতে যাওয়ার সময় একজন ক্রেতার একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। প্রতিটি মার্কেটের সামনে পুলিশ দুপুরের আগে থেকে অবস্থান নেয়।
সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, সদর উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে মনিহার এলাকায় একই ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ সেখানে পুনরায় লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠির আঘাতে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকনসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। তিনি পুলিশের এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেখলে পুলিশের গাত্রদাহ হয়। কারণ এই পুলিশ অবৈধ সরকারের মসনদ রক্ষার কবচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবৈধ সরকার পুলিশ ও বিএনপিকে এমন মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।
এ বিষয় যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, বিএনপির কোন কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ করা হয়নি।
বাঘারপাড়ায়ও বিএনপির কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ হামলা করেছে। এ সময় সময় গুলি বর্ষণ, বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় ভাঙচুর ও পৌর বিএনপি নেতার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয় পুলিশ। এতে অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই মনা জানান, কালো পতাকা মিছিলটি দলের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে শুরু করে চৌরাস্তা হয়ে পার্টি অফিসে ফেরার কথা ছিল। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শুরু করে পাওয়ার হাউজ এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ বিনাউস্কানিতে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ গুলি ছুড়তে শুরু করে। এতে যশোর জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক লিটন মোল্লা ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক একলাজ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং লাঠিপেটায় জহুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ হোসেন, সাবেক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সিদ্দিকী, বিএনপি নেত্রী শাহানাজ পারভিন ও জাহাঙ্গীরসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হন। তিনি আরও জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা আস্থায়ী কার্যালয় ত্যাগ করার পর পুলিশ কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরা ও জানালার গ্লাস ভাংচুর করে। এছাড়াও আমার বাড়িতে ৪০ থেকে ৫০জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত সদস্যদের হুমকি-ধাকমিও দিয়ে এসেছে।
এদিন কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামছুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মশিয়ূর রহমান, আনিসুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা শিকদার, দরাজহাট ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাফজুর রহমান, জামদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক দাউদ হোসেন , যুগ্ম আহ্বায়ক আসলাম হোসেন, উপজেলা স্বোচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বেল্লাল হোসেন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইছাসহ যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, চৌগাছা (যশোর) জানান, যশোরের চৌগাছা উপজেলা ও পৌর বিএনপি কেন্দ্র ঘোষিত কালো পতাকা মিছিল পুলিশের বাধার কারণে করতে পারেনি। ফলে দলীয় কার্যালয়ের তারা কালো পাতাকা হাতে নিয়ে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে চৌগাছা উপজেলা ও পৌর বিএনপি কালো পতাকা মিছিলের আয়োজন করে। দুপুরের পর হতে উপজেলার সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোর নেতাকর্মীরা একত্রিত হতে থাকেন। কিন্তু সকাল হতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। যখন যে নেতা কর্মী কার্যালয়ে আসতে থাকেন তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়। বিকেলে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জহুরুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক ইউনুস আলী, এমএ সালাম, মাসুদুল হাসান, পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র সেলিম রেজা আওলিয়ার, সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল হালিম চঞ্চল, সার্ংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর সাহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক কাউন্সিলর আনিছুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা কিছু নেতাকর্মী নিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তবে তাদের কার্যালয় হতে বাইরে বের হতে দেয়নি পুলিশ। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের ভেতরেই কালো পাতাকা হাতে নিয়ে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সভা, সমিতি, মিছিল, মিটিং সবই আমার অধিকার। কিন্তু অবৈধ এই সরকার প্রশাসন দিয়ে আমাদের সেই অধিকারকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। মানুষ জেগে উঠেছে, যত বাধাই আসুক না কেন সব বাধা উপেক্ষা করে নিশিরাতের এই সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে বিতাড়িত করে দেশে প্রকৃত জনগণের সরকার আমরা প্রতিষ্ঠিত করব ইনশাল্লাহ।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ জানান, ঝিনাইদহে পুলিশের বাঁধায় পন্ড হয়েছে বিএনপির কালোপতাকা মিছিল। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে জেলা বিএনপির কার্যালয় চত্বরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। পরে দলীয় কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
পুলিশের বাঁধায় মিছিল করতে না পেরে সেখানেই সমাবেশ করেন তারা। এ সময় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, সহসভাপতি কামাল আজাদ পান্নু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, আলমগীর হোসেন আলমসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।