মনিরামপুরে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদের জন্য চাচাতো ভাই সন্ত্রাসীদের দিয়ে খুন করিয়েছে উদয়কে,শ্যূটারসহ আটক ৪

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার টেকেরহাট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি ও নেহালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি উদয় শংকর বিশ্বাসকে তারই চাচাতো ভাই পবিত্র বিশ্বাস সন্ত্রাসীদের দিয়ে হত্যা করিয়েছেন। টেকেরহাট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতির পদটি দখল করতে চান পবিত্র বিশ্বাস । এ কারণে উদয় শংকর বিশ্বাসকে হত্যা করা হয়। হত্যায় জড়িত শ্যূটারসহ চার জনকে আটকের পর এই তথ্য জানতে পেরেছে ডিবি পুলিশ। গত বুধবার অভয়নগর উপজেলার সরখোলা এবং মনিরামপুর উপজেলার পাচাকড়ি গ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় হত্যাকা-ে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
আটকরা হলেন, অভয়নগর উপজেলার সরখোলা গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আল আমিন মোল্লা (২৮), হান্নান মোল্লার ছেলে সুমন হোসেন (২৪), শহিদুল ইসলামের ছেলে শামীম হোসেন (২৮) ও মনিরামপুর উপজেলার পাচাকড়ি গ্রামের মৃত আব্দুস সালাম গাজীর ছেলে রাসেল কবির (২৭)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই আমিরুল ইসলাম জানান, পাচাকড়ি গ্রামের মৃত রনজিৎ বিশ্বাসের ছেলে উদয় শংকর বিশ্বাসকে গত বছরের ১৬ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। টেকেরহাট বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা ছবি রানী বিশ্বাস অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মনিরামপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে থানার পুলিশ তদন্ত করে। পরে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি বলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে গত বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে অভয়নগর উপজেলার সরখোলা গ্রামে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে আল আমিন মোল্লা, সুমন হোসেন ও শামীম হোসেনকে আটক করেন। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন মোল্লা ও সুমন হোসেন সরাসরি হত্যা মিশনে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এছাড়া আটক শামীম হোসেন অপর দুই জনকে হত্যায় সহায়তার কথা স্বীকার করেন। পরে আল আমিন মোল্লার স্বীকারোক্তিতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত তারই একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে আটক ৩ জনের স্বীকারোক্তিতে মনিরামপুর উপজেলার পাচাকড়ি গ্রামে অভিযান চালিয়ে হত্যাকা-ে সহযোগিতার অভিযোগে রাসেল কবিরকে আটক করা হয়।
ডিবি পুলিশ জানায়, আটক আল আমিন মোল্লা ও সুমন হোসেন সরাসরি হত্যা মিশনে ছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উদয় শংকর বিশ্বাস টেকেরহাট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি। এ জন্য তাকে হত্যা করে সভাপতির পদটি দখল করতে চান তারই চাচাতো ভাই পবিত্র বিশ্বাস। এ কারণে আল আমিন মোল্লা ও সুমন হোসেনের সাথে যোগাযোগ করেন পবিত্র বিশ্বাস। তিনি আল আমিন মোল্লাকে ওই বিদ্যালয়ের দফতরির পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়া এবং মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উদয় শংকর বিশ্বাসকে হত্যা করতে বলেন। একই সাথে পবিত্র বিশ্বাস তাকে ৩ রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি পিস্তলও সরবরাহ করেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৬ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আল আমিন মোল্লা ও সুমন হোসেন মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলি চালিয়ে উদয় শংকর বিশ্বাসকে হত্যা করেন। গুলি করেন আল আমিন মোল্লা এবং মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন সুমন হোসেন। হত্যার পর মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় পথে পবিত্র বিশ্বাসের এক সহযোগীর কাছে পিস্তলটি দিয়ে দেন আল আমিন মোল্লা।
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই আমিরুল ইসলাম জানান, তারা হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী পবিত্র বিশ্বাসকেও আটকের জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাচাকড়ি বৈকালী মোড়ের চা দোকানি দশরাথ ম-ল জানান, ডিবি পুলিশের হাতে আটক আল আমিন মোল্লা ও সুমন হোসেন হত্যাকা-ের আগে তার দোকানে এসে চা খেতে এসেছিলেন। আটকের পর এই দুই জনকে গত বুধবার পাচাকড়ি গ্রামে নিয়ে এসেছিলো ডিবি পুলিশ। তখন তিনি তাদেরকে চিনতে পারেন। উপস্থিত অসংখ্য মানুষের সামনে আটক ওই দুই জন উদয় শংকর বিশ্বাসকে হত্যা এবং কে হত্যা করতে বলেছিলেন তা প্রকাশ করেন।
এদিকে আটক চার জনকে বৃহস্পতিবার ডিবি পুুলিশ আদালতে সোপর্দ করলে এর মধ্যে আল আমিন মোল্লা ও সুমন হোসেন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অবন্তিকা রায় তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।