প্রসঙ্গ : সীমান্ত হত্যার বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান

0

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি করে, কুপিয়ে হত্যা করছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি এ হত্যা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। সপ্তাহের অধিকাংশ দিন দেশের সীমান্তে অঞ্চল থেকে এমন হত্যার খবর সংবাদমাধ্যমে আসছে। চলতি বছরের প্রথম মাসেই খুন হয়েছে ১৪ জন। বিএসএফ নিহতদের গরু পাচারকারী, চোরাকারবারী, অনুপ্রবেশকারী ইত্যাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। নিহতরা বাংলাদেশী হওয়ায় দেশের জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করছে, হত্যার জন্য ভারত সরকারের কাছে বিএসএফের সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিচার দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু ভারত সরকার এ পর্যন্ত কোন বিচার করেনি। একমাত্র ফেলানী হত্যার বিচার করলেও তার রায় বাংলাদেশের জনগণকে হতাশ করেছে। বছরের পর বছর ধরে বিএসএফ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে আর সরকার তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু বলছে। এ নিয়ে নিহতদের স্বজন ছাড়াও জনমনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে-যা মাঝে মাঝেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। মানুষের দাবি সরকার এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতকে বাধ্য করুক।
এমন একটি মুহূর্তে বাংলাদেশর পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছে, আমরা সীমান্ত হত্যার বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান দেখতে চাই। রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা সীমান্তে একটি মৃত্যুও দেখতে চাই না। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এটি যে গ্রহণযোগ্য নয় সে বিষয়ে ভারতও একমত হয়েছিল।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবারই বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে সীমান্ত হত্যার বিষয়ে ভারতকে বাংলাদেশের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি বড় দ্বিপীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ভারতের সীমান্তরা বাহিনীর গুলিতে কমপে ১১৪৪ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। সীমান্তে মৃত্যু কমিয়ে আনা হবে, দিল্লি সবসময় এমন প্রতিশ্র“তি দিলেও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা অব্যাহত রেখেছে বিএসএফ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিএসএফের গুলিতে কমপে ৪৩ বাংলাদেশীকে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত মাসেও ভারতের সীমান্তের কাছে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক রয়েছি’। আমরা আমাদের মন্ত্রীদের মুখে এই একই কথা শুনে আসছি প্রায় এক যুগ ধরে। ইতোপূর্বের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে পার্থক্য শুধু শব্দগত। বারবার একই কথা শুনতে শুনতে জনগণ এখন এসব কথার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে তারা চায় একটি কড়া প্রতবিাদ, যা শুনতে এবং ভাবতে বাধ্য হয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। আমরা জানি, শক্তর বিচারে দেখলে আমাদের কথা স্বার্থগত প্রশ্নেব ভারত আমাদের কথা শুনতে অনেকটা বাধ্য। কারণ বাংলাদেশের কাছে তাদের স্বার্থ বা প্রয়োজনের শেষ নেয়। ভারত নিশ্চয় সেটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় না। আমরা মনে করি, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে ভারতকে বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়া উচিত। সেই সাথে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করে সুসম্পর্ক তথা মন্ত্রীর বলা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার তাগিদ দেয়া জরুরি। আমরা আশা করি, সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে।