লোকসমাজ আছে, থাকবে আপনার পাশে

0

৩০অক্টোবর। অন্য সবার কাছে হতে পারে ক্যালেন্ডারের পাতার একটি দিন, হতে পারে গুরুত্বহীনও। কিন্তু লোকসমাজ পরিবারের কাছে এই দিনটিই সেরা দিন। কারণ এটিই তার জন্মদিন। ২৭বছর আগে ১৯৯৬ সালের ৩০ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ ঘটে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ দৈনিক লোকসমাজের। দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের সূর্যসন্তান, উন্নয়নের কারিগর, সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম পত্রিকাটির প্রকাশ ঘটান। আজ তিনি নেই। প্রায় পাঁচ বছর আগে তিনি ছেড়ে গেছেন পৃথিবীর মায়া। আজ আমরা তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা আর অফুরন্ত ভালোবাসায়। মহান ¯্রষ্ঠা মেহনতি মানুষের নয়নমণিকে দান করুন জান্নাতুল ফেরদৌস। আমরা স্মরণ করি দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া লোকসমাজ পরিবারের সকল সদস্যকে। একই কামনা তাদের জন্যেও। শুভেচ্ছা, অভিনন্দন,ভালোবাসা জানাই কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী, প্রতিনিধি, বিজ্ঞাপনদাতা,পাঠক, এজেন্ট ও হকারদের। শুভ কামনা সবার জন্য।
দৈনিক লোকসমাজ আজ ২৮বছরে পদার্পণ করছে। মহাকালের গর্ভে ২৭টি বছর বিলীন হলেও বিলীন হয়নি লোকসমাজ প্রকাশের সেই প্রয়োজনীয়তা, বরং আজ বিরাজ করছে আগের চেয়েও কঠিন বাস্তবতা। বর্তমান শাসকদলের ১৯৯৬-এর শাসনামলে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনশৃঙ্খলা, আইনের শাসন পরিস্থিতি মানুষকে অসহায় করে তুলেছিল। পূর্ববর্তী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক শাসন থেকে বেরিয়ে হঠাৎ অস্বাভাবিক ব্যবস্থায় পড়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে ওঠে। সেই সময়কালে যশোরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে সরকার সমর্থক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, খুন,বন্দুকযুদ্ধ, ঠিকাদারি, ভূমিদখল,অপহরণ, ধর্ষণের মহামারিতে ক্ষতির পাশাপাশি সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জনরোষের। কিন্তু সরকার ব্যবস্থার উল্টোরথের চাকায় পিষ্ট হয়ে থমকে যায় তার বহিঃপ্রকাশ। বহুমুখী অত্যাচারে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষের পাশে দাঁড়াবার সাহসটাও হারিয়ে ফেলে জনতা । এমন একটি সময়ে গণমানুষের নেতা লৌহমানবখ্যাত তরিকুল ইসলাম জনতার কণ্ঠধারণ ও সংগ্রাম এগিয়ে নিতে দৈনিক লোকসমাজ প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। নির্যাতন- নিপীড়ণে নির্বাক মানুষের কথাবলা ও প্রতিবাদের অভয়ারণ্য সৃষ্টিতে ১৯৯৬-এর ৩০ অক্টোবর তিনি মুক্ত করেন যশোরে আধুনিক প্রযুক্তির প্রথম পত্রিকা লোকসমাজ। বাকিটার সাক্ষী ইতিহাস। মানুষ লোকসমাজের পরতে পরতে খুঁজে পায় নিজেকে। জানতে পারে দেশ- জনতার হালহকিকত। সরকারের ভেতর বাইরে কী ঘটছে প্রতিদিন। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্রের বাস্তবতা কী। খুঁজে পায় অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রেরণা। লোকসমাজ হয়ে ওঠে এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের যাবতীয় দুষ্টু ক্ষতের সাক্ষী এবং জনতার ভ্যানগার্ড। সময়ের ধারায় আজও সেই দায়িত্ব পালন করছে লোকসমাজ। প্রমাণ দিচ্ছে তার জন্মের প্রয়োজনীয়তা ও সার্থকতা।
অবশ্য এই সার্থকতা অর্জনে বিসর্জনও কিন্তু কম দিতে হয়নি। দেশ,গণতন্ত্র, গণমানুষের স্বার্থরক্ষার এই লড়াইয়ের চরম মূল্য দিতে হয় জনতার নেতা তরিকুল ইসলাম ও তার হাতিয়ার লোকসমাজের। তরিকুল ইসলামকে কোনো অপরাধ ছাড়াই উদীচী হত্যাসহ বেশ কয়েকটি সাজানো মামলার আসামি করে টানা পাঁচ বছর হয়রানি করে আওয়ামী সরকার। অপরদিকে তুচ্ছ একটি ছড়া প্রকাশকে ইস্যু করে লোকসমাজের বিরুদ্ধে জারি করে অর্থনৈতিক অবরোধ। এরপর টানা ৯০৬দিন সরকারি- আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ছাপার অধিকার কেড়ে নেয়। ফলে পত্রিকা দাঁড়াবার আগেই আর্থিক দুর্বলতার শিকার হয়। এতে শুধুু লোকসমাজ নয়, ক্ষতির শিকার হন কর্মরত শতাধিক সাংবাদিক কর্মচারী। তবে এসবে দমে যাননি তিনি। বন্ধ হতে দেননি একটি সংখ্যাও। তাঁর অবর্তমানে সেধারাই অব্যাহত আছে,থাকবেও অনন্তকাল। এ সময় প্রযুক্তির গতিধারায় যুক্ত হয়েছে অনলাইন ও ই-পেপার। চলার পথে সময়ের চাহিদায় যুক্ত হবে নতুন সবকিছুই। এজন্য প্রয়োজন আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা ও দোয়া।
সুপ্রিয় পাঠক-শুভাকাক্সক্ষী, সুধিজন, আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন আজকের ৩০ অক্টোবর অন্য আর দশটা ৩০ অক্টোবরের মত নয়। দেশের মানুষ আজ ভোট, ভাত, গণতন্ত্র, ও বাঁচার নিশ্চয়তার জন্য আন্দোলন করছে। টানা ১৫ বছর এ আন্দোলন চলছে। প্রাণ দিচ্ছে মানুষ। আমাদের আত্মপ্রকাশের অঙ্গীকারে আমরাও এর সাথী হয়েছি। মুক্তিকামী মানুষের চিৎকার, আর্তনাদ তুলে ধরার দায়িত্বে আমরা অবিচল। কর্তৃত্ববাদের প্রবল উত্থানে সীমিত হয়ে পড়া সুযোগের বেড়াজাল মোকাবিলা করেই আমরা বলছি আপনার-আপনাদের কথা, আমাদের এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, মানুষের মুক্তি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্জন অবধি। আমরা আশা করি আপনারাও থাকবেন আমাদের পাশে। দোয়া রাখবেন প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা আপনার আমার সবার প্রিয় নেতা তরিকুল ইসলামের জান্নাতুল ফেরদৌস কামনায়। দোয়া করবেন লোকসমাজের শুভ কামনায়।