ভূমিকম্প মোকাবিলায় জেলায় জেলায় প্রস্তুতি প্রয়োজন

0

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা একটি অপরিকল্পিত নগর হিসেবে পরিচিত। পুরানো ঢাকাসহ নতুন ঢাকার অর্ধেকাংশ এলাকার বহুতল ভবনগুলো রাজউকের অনুমোদনের বাইরে নির্মিত। ফলে প্রায় প্রতিটি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে ভূমিকম্পের জন্য তা মহাবিপদের কারণ হতে পারে। পুরানো এ আলোচনা ফের শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এদিক থেকে এটি মৃদু ভূমিকম্পের পর্যায়ে পড়লেও এর উৎপত্তিস্থল ঢাকার খুব কাছে রূপগঞ্জ বা দোহার উপজেলা হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এখন নগরীতে বড় আকারের ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন অনেকে। সবাই প্রশ্ন তুলেছেন ভূমিকম্প মোকাবেলায় আগাম কোনো প্রস্তুতি আমাদের আছে কি না। ঘটনা ঘটলে নয়, ঘটার আগেই প্রস্তুতি চান সবাই। আমরাও তাই চাই।
মার্কিন ভূতাত্বিকরা উৎপত্তিস্থল দোহার বললেও ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সংস্থার মতে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের মাঝামাঝি স্থানে ছিল এর কেন্দ্র। এক্ষেত্রে যে বক্তব্যই সঠিক হোক না কেন, দুটি কেন্দ্রেরই অবস্থান রাজধানী ঢাকার অতি কাছে। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলায় ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছিল। এর পরের বছরগুলোয় ভূমিকম্পগুলোর কেন্দ্রস্থল ছিল মূলত সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার মধ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঢাকার আশপাশে বেশি ভূমিকম্প হতে দেখা যাচ্ছে। কাজেই এখানে একটি বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সার্বিক বিশ্লেষণে একথাও বলা চলে যে, গোটা বাংলাদেশই এখন ভূমিকম্প ঝুঁকিতে। এমন অবস্থায় উদ্বেগের বিষয় হলো, ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। অথচ পূর্বপ্রস্তুতিই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। ভূমিকম্প মোকাবিলার যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও জাপানের মতো দেশে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সে তুলনায় আমাদের প্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য অতি নগণ্য। কাজেই বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হলে আমাদের কী অবস্থা হবে, তা ভাবলে গা শিউরে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বলছেন, রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর অধিকাংশ বাড়িঘর-স্থাপনা ধসে পড়বে। এ অবস্থায় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য বিপদ ও ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত। নগর-মহানগরে বিল্ডিং কোড না মেনে যেভাবে অপরিকল্পিত উপায়ে ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। তাতে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প একটু বেশি সময় স্থায়ী হলেই ঘটে যেতে পারে প্রলয়ংকরী ধ্বংসলীলা। কাজেই এ ব্যাপারে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
আমরা মনে করি সময় কাজে লাগিয়ে সবার আগে ভেঙে ফেলতে হবে সব শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে জেলায় জেলায় মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। থেমে থাকা ভূমিকম্পসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের বিষয়টি এখনই চালু করে নিয়মিত চলমান রাখতে হবে। প্রস্তুতির বিষয়টি মাঝে মধ্যে মহড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শহরে প্রশিক্ষিতদের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম গঠন করতে হবে। মনে রাখতে হবে ঝড় জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাষ থাকলেও ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাষ এখনও আবিষ্কার হয়নি। ফলে অজানা, অদেখা ঘাতকের সাথে লড়াইয়ের কোন পথ নেই। আছে শুধু আঘাতের পর ক্ষতি কমানোর সীমিত সুযোগ, আর তা কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আশা করি সরকারের কর্তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন।