বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে

0

 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অস্বাভাবিক বাণিজ্য ঘাটতির কারণে দেশের অর্থনীতি এখন বিপদসীমায় আছে। এখন বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.৫ শতাংশ। এটি যদি জিডিপির ৪ শতাংশ হয়, তাহলে শিগগিরই অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) এক হাজার ২৬৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৮১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। এতে ৪৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ তিন হাজার ৩২৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। পিআরআইও বলছে, দেশের যে বাণিজ্য ঘাটতি, তার অন্যতম প্রধান কারণ আমদানি বেশি, রপ্তানি কম। এ ছাড়া আমাদের অর্থনীতিতে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ সংকট। এর পেছনে বৈশ্বিক কারণও রয়েছে। হঠাৎ করে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। রিজার্ভের সংকট দেখা দিয়েছে। গত ৫০ বছরে অনেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও মানবসম্পদের তেমন উন্নয়ন হয়নি। অন্যদিকে প্রায় এক মিলিয়ন লোক দেশের বাইরে থাকলেও তাদের বেশির ভাগই বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে না। এরও প্রভাব পড়বে রিজার্ভে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য যে তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে মূল্যস্ফীতি, বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈদেশিক ঋণ। এই তিনটি চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে নানামুখী কাজ করতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের সামনে দুটি সমস্যা আছে। একটি হলো রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিতার অভাব। দীর্ঘ ২০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে তৈরি পোশাক পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্য রপ্তানির দিকে খুব একটা মনোযোগ দেওয়া হয়নি। সম্ভাবনা আছে এমন অনেক পণ্যও রপ্তানির তালিকায় আনা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরং এমন কিছু পণ্য ছিল, যেগুলো আগে ভালো বৈদেশিক আয় আনলেও সেগুলো এখন ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে অনেক পেছনের সারিতে চলে গেছে। কয়েক বছর থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও নিম্নমুখী। কৃষিজাত পণ্যের ভালো বাজার থাকা সত্ত্বেও এই পণ্য রপ্তানিতে তেমন অগ্রগতি নেই। এসব কারণেই অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার বিষয়টি এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কাজেই আমাদের এখনই সতর্ক হতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আমদানি বন্ধ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাণিজ্য সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে বিচ্ছিন্ন থাকার কোনো সুযোগ নেই। সম্ভাবনার জায়গাগুলোকে অবশ্যই পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। সমস্যা সমাধানেও দূরদৃষ্টির পরিচয় দিতে হবে।