যশোরে বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে মধ্যরাতে হামলা ও ভাঙচুর

0

মাসুদ রানা বাবু॥ যশোরে বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে মধ্যরাতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা বাড়ির বাইরে থেকে জানালা ও দরজায় ইট-পাটকেল ও কাচের বোতল ছুড়ে মারে। মধ্যরাতের এ হামলায় পরিবারগুলোর শিশু ও নারী সদস্যরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।
যশোর কোতয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম শনিবার সকালে জানান, শুক্রবার গভীর রাতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস বেগমসহ কয়েক নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনা জানা যায়। ঘটনাস্থলগুলোতে রাতেই পুলিশ পাঠানো হয়।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার সময় তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুৃলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতও বাড়িতে ছিলেন।


রাতে এ হামলার ঘটনার কিছু সময় পর ফেসবুক লাইভে আসেন অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। সেখানে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু সন্ত্রাসী জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে তাদের ও বিএনপির অন্য নেতাদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। বিষয়টি তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন।
সিসিটিভি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়- হামলাকারী মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। যাদের মধ্যে উঠতি বয়সী সন্ত্রাসী কিংবা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাও ছিল। রাত দেড় টার পর থেকে শুরু হওয়া এই সন্ত্রাসী হামলা শেষ হয় ২টা ২০ মিনিটে। সন্ত্রাসীরা ১টি রূপালী রঙের মাইক্রোবাস, ৪ থেকে ৫ টি প্রাইভেট কার এবং ১০টির অধিক মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। যার মধ্যে ১টি সাদা এবং ১টি কালো রঙের প্রাইভেটকার ছিল।


সন্ত্রাসীরা প্রথমে রাত দেড়টার পর ঘোপ পিলু খান সড়কস্থ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের বাসভবনে হামলা করে। গেটের বাইরে থেকে সন্ত্রাসীরা বৃষ্টির মত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বাসার জানালার কাচসহ বাসভবনে ব্যাপক ভাংচুর করে। গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টায় চালায়। ব্যর্থ হয়ে ইট-পাটকেলের সাথে কাঁচের বোতল ছুড়তে থাকে। তাদের ছোড়া ইট পাটকেল ও ভাঙা কাচের বোতলের টুকরোতে বাস ভাবনের আঙিনা ভরে যায়। তাদের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে পাশের বাড়ির বেলকুনিতে লাগানো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এয়ার কুলার মেশিন) ভেঙে যায়। বেশ কিছু সময় ধরে সন্ত্রাসীর তান্ডব চালিয়ে উপশহর বি ব্লকস্থ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর বাস ভবনে হামালা চালায়। সন্ত্রাসীর গেটের বাইরে থেকে ইট পাটকেল ও কাঁচের বোতল নিক্ষেপ করে বাসার জানালার কাচ ভেঙে ফেলে। সেখন থেকে উপশহর ডি ব্লকস্থ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান খাঁনের বাস ভবনে গিয়ে হামলা চালায়। তার বাসার সামনে রাখা মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে। গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশেরে চেষ্টা চালায়। সন্ত্রাসীদের ছোড়া ইট পাটকেলে বহুতল ভবনের সামনের অংশে লাগানো বেলকুনিসহ জানালার কাঁচ ভেঙে চুরমার হয়। সবশেষে সন্ত্রাসীরা ধর্মতলা মোড়স্থ জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের বাস ভবনে গিয়ে হামলা চালায়। তার বাস ভবনেও সন্ত্রাসীরা ইটপাটকেল ছুড়ে জানালার কাচ ভাংচুর করে। বৈদ্যুতিক মিটার বক্স ভেঙে ফেলে। বাসার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। সন্ত্রাসীদের এমন তা-বে বাসার মধ্যে থাকা শিশু থেকে শুরু করে মহিলারা ভীত সন্ত্রস হয়ে পড়েন।


হামলার প্রতিবাদে সকালে নগর বিএনপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড শাখার নেতাকমীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বিএনপি যখনই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার,আইনের শাসন, মানবাধিকার, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ জনগণের সকল ন্যায্যা দাবি এবং অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে । তখনই সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা জনতার আন্দোলনকে বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য এই ধরণের হামলা চালিয়েছে। ইতিপূর্বেও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একই ভাবে দলের নেতা কর্মীদের বাসভবনে হামলা চালায়। এভাবে রাতের আধারে সন্ত্রাসী হামলা করে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি করা যাবে না। যতদিন জনগণের অধিকার আদায় না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।
যশোর কোতয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, জয়বাংলা শ্লোগান দেয়া হয়েছিল কিনা জানা যায়নি, তবে ভাঙচুরের বিষয়ে শুনেছি। তবে বিএনপি নেতারা লিখিত কোন অভিযোগ করেননি।