খুনের লাগাম টানতে হবে

0

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। অরাজকতা, রাহাজানি, নিষ্ঠুরতা নৈমিত্তিক ঘটনায় রূপ নিচ্ছে। কথায় কথায় খুনের ঘটনা ঘটছে। যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এপ্রিলের শেষ থেকে এ পর্যন্ত যশোরেই ৩টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। লোহাগড়া, নওয়াপাড়া ও ফুলতলায় একটি করে হত্যাকান্ড ঘটেছে। ঘটেছে ঝিনাইদহেও। এছাড়াও কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম আলাউদ্দিন আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তোফাজ্জেল বিশ্বাসের (৫২) হাতের কবজি কেটে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। জানা যায়, পূর্ববিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বংশীতলা নতুন ব্রিজের ওপর দুর্বৃত্তরা তাঁর ওপর হামলা চালায় এবং কবজি কেটে রেখে পালিয়ে যায়। একই দিনের পত্রিকায় আরো পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে সমাজের স্থিতি নষ্ট হচ্ছে, মানুষের নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে এবং সমাজে অশুভ শক্তির আস্ফাালন বাড়ছে।
সোমবার রাতে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার তেলকাড়া গ্রামে চায়ের দোকানের কাছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বরিশালের উজিরপুরে নিখোঁজের চার দিন পর একটি খাল থেকে এক স্কুলছাত্রের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগরে সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নিজ বাড়িতে খুন হন রাব্বি নামে এক যুবক। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মহেষভেড় এলাকার একটি বাড়ি থেকে তানিয়া নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা যায়, যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রায়ই তাঁকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করত। তানিয়ার স্বজনদের দাবি, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বিন্যাদায়েরে নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়কের পাশের জলাশয় থেকে কাঁচামাল ব্যবসায়ী সাদ্দাম প্রামাণিকের (২৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় শরিফ হোসেন (৬৩) নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যায় তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তলই ব্যবহৃত হয়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধের দ্রুত ও যথাযোগ্য শাস্তি না হলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয় এবং সমাজে অপরাধ বেড়ে যায়। তাঁরা বাংলাদেশে অপরাধ বৃদ্ধির জন্য এ কারণটিকেই প্রধানত দায়ী করেন। অভিযোগ আছে, দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে অপরাধের যথাযথ তদন্ত হয় না। ফলে, অপরাধ করেও অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রভাবও তদন্তপ্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এসব অপতৎপরতা দূর করে বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুততর করার উদ্যোগ নিতে হবে। দিনে-দুপুরে এবং প্রকাশ্য রাস্তায় মানুষ খুন হবে। ঘরে-বাইরে, যানবাহনে ধর্ষণ হবে আর প্রশাসন তা প্রতিহত করতে পারবে না এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা আশা করবো, প্রশাসন তার মর্যাদা রক্ষায় অন্তত তৎপর হবে।