বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত হোসেনউদ্দীন হোসেন আর নেই

0

তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর)॥ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও গবেষক হোসেনউদ্দীন হোসেন (৮৩) আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
হোসেনউদ্দীন হোসেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার বিকাল ৫টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে শাহানাজ রাহানা রত্না।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার কথাসাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেনকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে গতকাল ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছিল।
মেয়ে শাহানাজ রাহানা রত্না জানান, ২০১৯ সালে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। পরবর্তীতে গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। এ ছাড়াও তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত ১৪ মে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিন তাকে যশোর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সিটিস্ক্যান রিপোর্টে তার ব্রেন ড্যামেজ ধরা পড়ে। এ ছাড়া তার ফুসফুসে পানি জমেছিল।
তিনি বলেন, ‘সোমবার বাবার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। এরপর বিকাল ৫টার দিকে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।’
ইতিহাসবিদ, ঔপন্যাসিক, কবি ও সাংবাদিক হোসেনউদ্দিন হোসেন ২০২১ সালে প্রবন্ধ ও গবেষণা ক্যাটাগরিতে বাংলা একাডেমি পদকে ভুষিত হন।
১৯৪১ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে এক বনেদি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম কলিম উদ্দীন এবং মাতার নাম মরহুম আরিছন নেছা।
১৯৬৩ সালে ঝিকরগাছা থানার অন্তর্গত লাউজানি লক্ষ্মীপুর গ্রামের মেয়ে হাসিনা আক্তারের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দুই পুত্র এবং দুই কন্যাসন্তানের জনক ছিলেন হোসেনউদ্দীন।
শৈশবকাল থেকে হোসেনউদ্দীন হোসেন কবিতা লিখতে শুরু করেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি একটি হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশ করেন। তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে কলকাতার দৈনিক লোকসেবক পত্রিকায় ছোটদের বিভাগে। এরপর পর্যায়ক্রমে কলকাতা ও ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত তার গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
হোসেনউদ্দীন হোসেনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মোট ১৭টি। এগুলো হচ্ছে যশোরাদ্যদেশ (১৯৭৪), যশোর জেলার কিংবদন্তী (১৯৭৪)- ১ম খণ্ড, যশোর জেলার কিংবদন্তী (১৯৭৯)- ২য় খ-, অমৃত বৈদেশিক (১৯৭৫), ভলতেয়ার ফ্লবেয়ার কলসত্ব এয়ী উপন্যাস ও যুগমানস (১৯৮৮), ঐতিহ্য আধুনিকতা ও আহসান হাবীব (১৯৯৪), বাংলার বিদ্রোহ (২০০৩) ১ম খন্ড, বাংলার বিদ্রোহ (২০০৬) ২য় খণ্ড, নষ্ট মানুষ উপন্যাস (১৯৭৪), প্লাবন এবং একজন উপন্যাস (১৯৭৯), সাধুহাটির লোকজন উপন্যাস (২০০১), ইঁদুর ও মানুষেরা উপন্যাস (২০০৮), সোনালি জলের কাঁকড়া উপন্যাস (২০১১), সমাজ সাহিত্য দর্শন প্রবন্ধ (২০১০), রণক্ষেত্রে সারাবেলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি (২০১২), লোকলোকোত্তর গাঁথা কিংবদন্তী (২০১২), ঊনাশির শ্রেষ্ঠগল্প সম্পাদনা (১৯৭৯) এবং মরাল সম্পাদনা (২০০৮ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে)।
১৯৯০ সালে চাঁদের হাট পদক পান তিনি। এরপর ১৯৯৬ সালে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্মৃতি পদক, বিজয় দিবস পদক (১৯৯৭), মাইকেল মধুসূদন একাডেমি পদক (২০০১), কোলকাতা শিমুল পলাশ সম্মাননা পদক, কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা পদক (২০০৩), কলকাতা বিধান নগর (সল্টলেক) মেলা পদক (২০০৪), কন্ঠশীলন সম্মাননা পদক (২০০৬), গুণীজন সম্মাননা পদক, এমএলহাই স্কুল সম্মাননা পদক, ক্যাম্ব্রিজ স্বর্ণপদক (ইংল্যান্ড)- (২০০৬), কপোতাক্ষ সম্মাননা পদক, আয়েসা জব্বার সম্মাননা পদক (২০০৭), বইমেলা সম্মাননা পদক-(যশোর ইনস্টিটিউট), সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সম্মাননা পদক (২০১০)।
২০০৬ সালে হোসেনউদ্দীন হোসেনকে ক্যামব্রিজ, ইংল্যান্ড থেকে সেরা ১০০ জন লেখকের একজন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বাংলা বিভাগে হোসেনউদ্দীন হোসেনের ‘ইঁদুর ও মানুষেরা’ উপন্যাসটি এমএ ক্লাসে পাঠ্যসূচি করা হয়।