হালখাতার টাকা পরিশোধ করতে কম দামে ধান বিক্রি করছেন কৃষক

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের খাটবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মোড়ল এবারের বোরো মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেন। তিনি বলেন, রোপণ ও পরিচর্যার জন্যে তাকে ধার-দেনা করতে হয়েছে। বিশেষ করে সার, কীটনাশক ও সেচের পেছনে তার ব্যয় হয়েছে আনেক টাকা। সবই বাকিতে নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সেই টাকা আদায়ে দোকানে হালখাতা শুরু হয়েছে। হালখাতার টাকা যোগান দিতে গিয়ে কম দামে ধান বিক্রি করে দিয়েছি।
আব্দুল মোড়লের মত যশোরের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকরাও হালখাতার চাপে দিশেহারা। বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে গ্রামঞ্চলে হালখাতা শুরু হয়। এখন তা পুরোদমে চলছে। কৃষকরা জানান ধান চাষের জন্য জমি প্রস্তুত, সেচ এবং সার কীটনাশক বাকিতে সরবরাহের প্রচলন রয়েছে। তারা কৃষকের ঘরে ধান ওঠার অপেক্ষায় থাকেন। ধান কাটার সাথে সাথে হালখাতা শুরু হয়ে যায়। তাই কষ্টার্জিত বোরো ধান কৃষকের গোলায় ওঠার আগেই আড়তে চলে যাচ্ছে।
মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের গাজীও খাটবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মোড়লের মত অনেকেই ধান বিক্রির টাকায় হালখাতার চাপ সামলাচ্ছেন। তারা বলেন, এক সময়ে বোরো ধান ওঠার পর খোরাকি রেখে বাকি ধান গোলা ভরে রেখে দিতাম। সুবিধামত সময়ে সেই ধান বিক্রি করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতাম । কিন্ত গত কয়েক বছর ধরে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। উৎপাদন ব্যয় এতোটা বেড়েছে যে মাড়াই পর্যন্ত খরচ মেটাতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি।
সদর উপজেলার মেঘলা গ্রামের কৃষক আয়ুব হোসেন বলেন, ধান কাটার পর হালখাতার চাপ শুরু হয়েছে । সেই চাপ সামলাতে গিয়ে ধান মজুদ করা হচ্ছে না। এক সময়ে বেশি দামের আশায় ধান রাখি করতাম।
কেশবপুরের বকুলতলা গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, এক সময় ধান চাষ করে গোলা ভর্তি করতাম। আর ক্রেতারা ধান কেনার জন্য আমাদের কাছে ধর্না দিতো। কিন্ত এখন সেই দিন শেষ হয়ে গেছে। ধান মাঠ থেকে ঘরে আসার আগেই বিক্রেতার কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। সে কারণে এখন ধান গোলায় রাখার কোনো সুযোগ নেই। তবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এবার ধান চাষে পর্যাপ্ত লোকসান হয়েছে।
মনিরামপুরের ঝাঁপা গ্রামের সার ও কীটনাশক বিক্রেতা আসাদুল হক বলেন, সারা বছর আমরা বাকিতে কৃষককে সার কীটনাশক সরবরাহ করি। এটা করতে গিয়ে আমাদেরও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা গ্রাম্য মহাজনের দ্বারস্থ হতে হয়। সে কারণে বকেয়া টাকা দ্রুত আদায়ের জন্যে হালখাতা করি। হালখাতা থেকে যে টাকা পাই সেই টাকায় বকেয়া পরিশোধ করি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, এ বছর জেলায় বোরো ধান আবাদরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর। সেখানে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এ থেকে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। শতভাগ ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। তবে এবার ধান কাটার মৌসুমে তাপপ্রবাহ চললেও সেটি কৃষকের জন্য আশীর্বাদ ছিল। যে কারণে কৃষক খুব দ্রুত সময়ে ধান ঘরে তুলতে পেরেছে।