জিয়ার শাহাদতবার্ষিকীতে গণতন্ত্র মুক্তির প্রত্যাশা

0

আজ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের ৩০ মে গভীর রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী অফিসার অভ্যুত্থানের নামে মহান স্বাধীনতার ঘোষককে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয় বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। দেশের শীর্ষ স্থানীয় রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা স্পষ্টই বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের সমগ্র অস্তিত্বের সঙ্গে। ১৯৭১ সালে তীব্র গণআন্দোলন চলাকালে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাক সেনাবাহিনী অপ্রত্যাশিতভাবে গণহত্যা শুরু করার পর গণআন্দোলনের প্রধান নেতা, নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালীদের সরকার গঠনে দুর্বার আন্দোলনরত দামাল ছেলেরা তখনও রাস্তায়। কিন্তু তাদের কাছে নেতৃত্বের সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় রাজপথেই পাকবাহিনীর গণহত্যা ও প্রচন্ড নির্যাতনের শিকার হন। গণহত্যায় জাতি যখন হতবাক, ভীত, সন্ত্রস্ত ও বিভ্রান্ত, ঠিক তখনই আশার আলো হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন সেদিনের বাঙালী মেজর জিয়াউর রহমান। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ২৭ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি নিজ নামে এবং ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সে ঘোষণায় তিনি বাঙালিদের আহ্বান জানান স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার। মূলত তাঁর সে ঘোষণাটিই সেদিন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাঙালী সেনা ও জাতিকে উজ্জীবিত অনুপ্রাণীত করেছিল। জিয়া নিজে জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেন। তার দুর্দান্ত সাহসী ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে আছে। যদিও তা বারবার মুছে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে একটি মহল। সে চেষ্টা এখনও প্রবল রয়েছে। আমরা ইতিহাস বিবৃতির নিন্দা জানাই।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের যুগান্তকারী অবদান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে গভীর রাতের সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। সরকারের মালিকানাধীন চারটি দৈনিক ছাড়া সব সংবাদপত্রের প্রকাশনাও বাতিল করেন। বাকশালের সে শ্বাসরুদ্ধকর দুঃশাসনের অবসান হয় ও ৭৫-এর ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক ঘটনার পর ইতিহাসের নির্মম হত্যাকান্ডের পর বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর খন্দকার মুস্তাক আহমেদ-এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে নতুন শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। এর পর ৩ নভেম্বর আর এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা পাল্টা দখল করেন খালেদ মোশাররফ। তিনি জিয়াউর রহমানকে বন্দি করেন। পরে ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্যে উদ্ধার করে জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় আনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে তিনি সেনাপ্রধান ও পরে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশ ও সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান। তিনি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী তথা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে পুনরায় সব দলমতের রাজনীতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। তার এ অবদানে আবারও প্রবর্তিত হয়েছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র। যা আজ মৃতপ্রায়। ভোট ও কথা বলার অধিকার পর্যন্ত আজ নেই মানুষের। মধ্যরাতে প্রহসনের নির্বাচনে জাতি হারাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সব অধিকার।
জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রবর্তন ছিল জিয়ার বিশেষ অবদান। এই রাজনীতিকে এগিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি দল হিসেবে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও জিয়া যুগান্তর ঘটিয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথেচ্ছ লুটপাট বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সংবিধানে তিনি অর্থনৈতিক ন্যায্যতার বিধান যুক্ত করেছিলেন। এর ফলেই দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হয়েছিল, জাতীয় পুঁজির বিকাশ ঘটতে শুরু করেছিল। দুর্ভিক্ষের দেশ ও ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’র দুর্নাম ঘুচিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথে পা বাড়িয়েছিল। ভারতের আধিপত্যবাদী নীতি ও কর্মকান্ডের বিরুদ্ধেও দেশপ্রেমিক জিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে গেছেন। তালপট্টি বাংলাদেশের দাবি করে তিনি ভারতকে কাঁপিয়ে দেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের বীর সেনাবাহিনী সীমান্তে সে সময় চলমান নাশকতা প্রতিহত ও ধ্বংস করেছিল। আওয়ামী বাকশালী সরকারের পেটোয়া বাহিনীর ভূমিকা পালনকারী রক্ষীবাহিনীর বিলুপ্তি ঘটিয়ে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে জিয়া সেনাবাহিনীকে নিজ মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
জিয়ার পররাষ্ট্রনীতিও ছিল খুবই ফলপ্রসূ। মূলত স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের নীতি অবলম্বন করেন। এতে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জিয়াউর রহমানই সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন। সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলো বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এসব দেশে লাখ লাখ বাংলাদেশী চাকরি পেয়েছিলেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধ করার ব্যাপারে জিয়ার প্রচেষ্টা এখনও প্রশংসিত হয় গোটা বিশ্বে। আঞ্চলিক রাজনীতিতেও জিয়া সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে গেছেন। সার্ক গঠনের প্রস্তাব জিয়াউর রহমানই প্রথম উত্থাপন করেছিলেন। তার সে প্রস্তাব ও পরিকল্পনার ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ে সার্ক গঠিত হয়েছে। যদিও ভারতের মোড়লীর কারণে সার্ক এখনও সফল সংস্থায় পরিণত হতে পারেনি, তারপরও অনেক অবদান রেখেছে। সাম্প্রতিক করোনা মোকাবেলায়ও সার্ক বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
রাষ্ট্রপতি জিয়া তাঁর বহুমুখি ঐতিহাসিক অবদানের জন্য দেশ ও বিদেশে যখন আলোচিত সমাদৃত হচ্ছিলেন তখনই তাঁকে বহুমুখি ষড়যন্ত্রে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। আজ তাঁর ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী। জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। একই সাথে তাঁর জন্য জান্নাতুল ফেরদৌস প্রত্যাশা করি। আমরা প্রত্যাশা করি, জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিতরা আবারো মুক্ত করবে গণগতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠা করবে জনতার ভোটাধিকার।