উন্নয়ন পরিসংখ্যানের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন!

0

সরকার তার উন্নয়নের নানা কর্মসূচি এবং চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে তা বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও যথাযথ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমরা প্রতিনিয়ত শুনছি, উন্নয়ন নিয়ে সরকারের মধ্যে পরিসংখ্যানের উন্নতিকে বড় করে দেখানোর প্রবণতা বেশি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানভিত্তিক উন্নতির চিত্র সুশোভিত করে তুলে ধরে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলা হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ নানা উন্নয়নচিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়। তার এর প্রত্যেকটির সাথে বাস্তবতার যথেষ্ট ব্যবধান স্পষ্ট হয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকার যে পরিসংখ্যান তুলে ধরে তার সাথে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দেশের অর্থনীতিবিদদের হিসাবে বিস্তর ব্যবধান মেলে। মাথাপিছু আয়ের বিষয়টি গোলকধাঁধার মধ্যে আটকে আছে। অনেকে স্কুলের গড় অংকের মতো হিসাব করে সরকার ঘোষিত মাথাপিছু আয়ের হিসাবটিকে ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছে।
সংবাদ বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিসংখ্যান দিয়ে দেশের যে উন্নয়নচিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, তার সাথে বাস্তবের যথেষ্ট অমিল থাকছে। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদরাও বারংবার বলছেন। কিন্তু সরকার তাতে কান দিচ্ছে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও অধিদফতর প্রায়ই উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে। এসব পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অর্থনীতিবিদরা দ্বিমত পোষণ করেন। সরকারের দেখানো উন্নয়নচিত্রকে তার কাগজ-কলমের উন্নয়ন বলে অভিহিত করে থাকেন। এর মূল কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, পরিকল্পনার সাথে পরিসংখ্যানের কোনো সমন্বয় নেই এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট অদক্ষতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টর ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ফিজিক্যাল ডাটা ফর ম্যাকিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বলা হয়েছে, সরকারের আর্থিক খাতের তথ্য-উপাত্ত সরবারাহে বড় ধরনের স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। যথাসময়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কত টাকা বরাদ্দ করা হয়, তা জানা যায় না। রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থ বিভাগ ও এনবিআরের মধ্যে গরমিল রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে আইএমইডির দেয়া তথ্যের সঙ্গে অর্থ বিভাগের মিল নেই। এমনকি, অডিট রিপোর্টও ঠিকমতো প্রকাশ করা হয় না। এমন আরও অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়। অর্থনীতি এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ ধরনের অসামঞ্জস্যতা দেশের উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি কি, তা অস্পষ্টই থেকে যাচ্ছে।
দেশে উন্নয়নের পরিসংখ্যান অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এতে সমন্বয়ের যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। দেখা গেছে, এক খাতের পরিসংখ্যান, সূচক ও তথ্য নিয়ে একেক মন্ত্রীরা একেক ধরনের তথ্য উপস্থাপন করছেন। দেশে অর্থের ঘাটতি নেই বলে এক মন্ত্রী বললেও আরেক মন্ত্রী বলেছেন, আমাদের আরও অর্থের প্রয়োজন। এমন বিপরীতমুখী তথ্যের জন্য দেশের প্রকৃত উন্নয়নের সঠিক চিত্র পাওয়া দুষ্কর। আমরা মনে করি, কাগজে-কলমে পরিসংখ্যানগত উন্নয়নের চিত্র না তুলে ধরে উন্নয়নের তথ্য নির্ভর চিত্র তুলে ধরা উচিৎ। এতে সরকারের উন্নয়নের বিশ্বাসযোগ্যতা মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। দেশে বিদেশে কেউ উন্নয়নকে অস্বচ্ছ বা কাগুজে উন্নয়ন বলে আপত্তিকর অভিযোগ করতে পারবে না।