প্রতীক্ষার বৃষ্টি এল তপ্ত যশোরে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ প্রায় এক মাসের তীব্র তাপদাহের পর অবশেষে যশোরে এল।  সোমবার বিকেল ৫টার পর যশোরের বিভিন্ন এলাকায় হালকা বাতাসসহ ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামে। রাত ৮টার পর বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। সেই সাথে ছিল ঘনঘন বজ্রপাত। তবে রাতে বজ্রপাতে কোন অঘটনের খবর মেলেনি।
গত ১০ এপ্রিলের পর থেকে যশোরের ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছিলো। যশোরে ৫২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াাস। প্রচন্ড এ তাবদাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে মানুষের জীবন।
গত ৪-৫ দিন ধরে দেশের কোথাও না কোথাও বৃষ্টি হলেও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের এ জেলায় ছিটেফোঁটা বৃষ্টিরও দেখা ছিলো না। বরং তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী ছিলো। এর বড় প্রভাব পড়তে থাকে কৃষিসহ জীববৈচিত্রের ওপর। তাই মরুময় প্রকৃতি থেকে নিস্তার পেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে মানুষের প্রাথনা ছিল এক পশলা বৃষ্টির।
অবশেষে প্রত্যাশিত সেই বৃষ্টির বার্তা নিয়ে সোমবার বিকেল থেকেই যশোরের আকাশে কালো মেঘ ছেয়ে যায়। এরপর শুরু হয় হালকা ঝড়ো বাতাস। ঝড়ো বাতাসের মধ্যেও মানুষ বৃষ্টি দেখতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। শহরের অলিগলিতে মানুষ মোবাইল ফোন নিয়ে মেঘ ও ঝড়ো বাতাসের ছবি ও ভিডিও তুলতে থাকে। এরই মধ্যে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শুরু হয় কাঙ্খিত বৃষ্টি। তবে সে বৃষ্টি বেশিক্ষণ স্থায়ী না হলেও স্বস্তি ফেরায় জনজীবনে। শীতলতা নেমে আসে সর্বত্র।
যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য মতে,  সোমবার বিকেলে ৩৫ কিলোমিটার গতি বেগে যশোরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সাথে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে। তবে ১ মিলিমিটারে কিছুটা কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তবে রাত ৮টার পর মুষলধারায় বৃষ্টি নামে। সোমবার যশোরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হালকা বৃষ্টির পর তাপমাত্রা নেমে দাঁড়ায় ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাবদাহের পর এ বৃষ্টি সবজি, পাট, ফল ও ফুল চাষের পাশাপাশি মাছ চাষের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। পাশাপাশি শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় বোরো ধানের আপাতত কোনো ক্ষতি হয়নি বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার সন্ধ্যায় বলেন, সোমবার বিকেলে সামান্য বৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত বাড়বে বলে আশা করা যায়। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত যশোরে সবজি, ফুল,পাট ও মাছ চাষের জন্যে বড় ধরনের উপকার বয়ে এনেছে। জেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর সবজি, ২৩ হাজার হেক্টর জমির পাট চাষ অনেকটা হুমকির মুখে পড়লেও সামান্য বৃষ্টিতে তা আবার সতেজ হয়ে উঠবে। পাশাপাশি গদখালীর ফুল চাষেও বেশ উপকার হবে।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যশোরের ৮ উপজেলায় প্রায় ৭৫ শতাংশ জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। বাকি ধানগুলো কেটে ঘরে তুলতে আরও তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। তবে সোমবার যশোরে বৃষ্টি হলেও ঝড় ও শিলাবৃষ্টির প্রকোপ কম ছিলো। ফলে বোরো আবাদের তেমন কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে করছিনা।
দীর্ঘ অনাবৃষ্টির পর জনমনে স্বস্তি এসেছে বলে জানান রিকশাচালক শফিয়ার রহমান। তিনি বলেন, আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া তিনি আমাদের দিকে চেয়েছেন। গরমে খুব কষ্টে ছিলাম। আজ থেকে প্রাণটা শান্তিতে ভরে যাচ্ছে।
কথা হয় রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রবাহের কারণে আমরা যশোরের মানুষ গত প্রায় এক মাস ধরে যে কষ্টে ছিলাম তা আজকের বৃষ্টিতে অবসান হয়েছে। আরও স্বস্তিদায়ক যে বৃষ্টির সাথে কোনো শিলাবৃষ্টি হয়নি। কারণ শিলা বৃষ্টি হলে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠের বোরো আবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।