কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতির শাস্তি কার্যকর হোক

0

সরকারি চাকুরেদের কাজে অবহেলার অভিযোগ নতুন নয়। নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে হাজির না হওয়া, অফিসে হাজিরা দিয়ে খোশগল্প করে বেড়ানো ইত্যাদি অভিযোগ অনেক পুরনো। আবার কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার অভিযোগও আছে অনেকের বিরুদ্ধে। অনেকেই দিনের পর দিন কর্মক্ষেত্রে না থেকেও বেতনভাতা তোলেন। এ অভিযোগ থেকে মুক্তির কোনো চেষ্টা যে আছে, তা মনে হয় না। তবে এ অভিযোগ সব সরকারি চাকুরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অনেক নিষ্ঠাবান ও মনোযোগী সরকারি চাকুরে পাওয়া যাবে, যাঁদের কর্মনিষ্ঠা, যোগ্যতা ও মননশীলতা বিভিন্ন বিভাগে উদাহরণ হয়ে আছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেরই মফস্বলে কাজ করতে অনীহা দীর্ঘদিনের। মফস্বলে পদায়ন হলে অনেক কর্মকর্তাই নিয়মিত অফিস করেন না বা নানা অজুহাতে কর্মক্ষেত্রের বাইরে থাকেন এমন অভিযোগও নতুন নয়। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২০ মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ফলে, উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত তদারক করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত তিনি। দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে স্কুল খোলার পর সরকার শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিলেও এ উপজেলায় তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
বিষয়টি প্রত্যক্ষ করে উপজেলার মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় তাঁকে নিয়ে আলোচনার পর তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। কর্মস্থলে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অতি সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন। শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, শিক্ষা কর্মকর্তার অনুপস্থিতির কারণে উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, প্রায়ই এমন খবর হয়।
খবরে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা কাক্সিক্ষত নয়। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবার আগে কাজের প্রতি মনোযোগী হতে হবে, যথাযথভাবে দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকারি অফিসে কাজ না বেতন তোলার পথ হবে। যারা টাকা তুলেছেন তাদের কাছ থেকে টাকা ফেরতসহ দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলায় শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার সংস্কৃতি থেকে কর্মকর্তারা বেরিয়ে আসতে বাধ্য হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।