সুপেয় পানির কষ্ট দূর হলো না শ্যামনগরে

0

শেখ আব্দুল হাকিম,শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)॥ ‘সব কিছুর কষ্ট সহ্য হয়, কিন্তু পানির কষ্ট যে সহ্য করা যায় না, বৃষ্টির পানি শেষ হওয়ার পর থেকে পানি টানার এ কাজ শুরু,সামনের বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত এভাবেই পানি টেনে আমাগো তেষ্টা মেটাতে হবে’-পঞ্চান্ন বছর বয়সী মৈফুল বিবি কথাটুকু শেষ করেই কলস কাঁখে সতীর্থদের সাথে মিলে বাড়ির পথ ধরেন। আইলা আক্রান্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার সোরা গ্রামের নদীর চরে দৃষ্টি নন্দন প্রকল্প পুকুর থেকে কর্দমাক্ত পানি সংগ্রহ করতেই তারা কাঠফাঁটা দুপুরে বাড়ি হতে প্রায় দুই কি. মি. দূরে এসেছেন। আক্ষেপ ভরা কন্ঠে তাদের সকলেরই অভিন্ন অভিযোগ, কত লেখালেখি হলো। কত বছর পেরিয়ে গেলো। কিন্তু আমাগো পানির কষ্ট দূর হলো না।
তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সর্বত্র তীব্র খরতাপ বৈশাখের এই গরমে শ্যামনগরের উপকূলীয় মানুষের জনজীবনসহ প্রাণীকুল বিপযস্ত হয়ে পড়েছে। ঘরে বৈদ্যুতিক ফ্যানের বাতাসেও যেন অগ্নি হাওয়া বইছে। অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তাই হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা। বেশ কিছু দিন ধরে দাবদাহে পুড়ছে সারাদেশ।
কৈখালী, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, গাবুরা ও মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের ভুক্তভোগী মানুষেরা জানান, চারিদিকে পানি থাকলেও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, দেশে চিংড়ি ঘের আসায় বড় লোকেরা খাল,বিল ও মিষ্টি পানির পুকুরগুলোতেই নদীর লবণ পানি উঠিয়ে চিংড়ি চাষ করায় আমরা পড়েছি পানির সংকটে। পরিবারের চাহিদা মিটাতে পানির জন্যে কলসি হাতে দূর-দূরান্তে ছুটছে মানুষ। সুপেয় পানির সংকট এ অঞ্চলের মানুষের যেন নিত্যদিনের সমস্যা। সরকার আমাগো পানির ড্রাম দিলেও তা পাচ্ছে টাকার বিনিময়ে বড় লোকেরা।
তীব্র খরতাপ বৈশাখে এলাকার বেশির ভাগ খাল ও পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় কোথাও গোসল এবং খাবারের পানি মিলছে না। মাটির নিচে পানি লবণাক্ত হওয়ায় লোকজনকে আর্সেনিকযুক্ত নলকূপ কিংবা নোংরা পুকুরের পানি পান করতে হচ্ছে। ফলে এসব পানি পান করে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শ্যামনগর উপজেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় এই এলাকার ৪০/৬০ শতাংশ মানুষ খাবার পানির সংকটে রয়েছে। সরকারিভাবে এ তথ্য দেওয়া হলেও বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ বলে দাবি স্থানীয়দের।
শ্যামনগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের তথ্যমতে উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে সরকারি খাওয়ার পানির পুকুর আছে ২২টি, পানির ফিল্টার আছে ৬৫৬টি, অকেজো রয়েছে ১৮৫টি, গভীর নলকূপ ২ হাজার, অগভীর নলকূপ আছে ৫শ, আরও মেশিন রয়েছে ৫টি, সুপেয় পানির সমস্যা সমাধানে পানির ট্যাংক বিতরণ করা হয়েছে ৩ হাজার।
শ্যামনগর সদর হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার গাজী তরিকুল ইসলাম বলেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি বাহিত রোগের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশির ভাগ শিশু ও বৃদ্ধাদের ডায়ারিয়া, আমশা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজবুল আলম বলেন, পানির সমস্যা সমাধানে আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।
সাতক্ষীরা- ৪ আসনের এমপি আতাউল হক দোলন বলেন, জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে। আমি কাজে বিশ্বাসী। শ্যামনগর উপকূলীয় খাওয়ার পানির সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। সরকারি ভাবে তিন হাজার পানির ড্রাম বিভিন্ন ইউনিয়ন গুলোতে দেওয়া হয়েছে।